ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ (ডিইউসিএস) আয়োজনে এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যন্ড কমার্স ব্যাংক লিঃ এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হলো ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি উৎসব ২০১৭’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারের মতো এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৯টি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় দল আবৃত্তি পরিবেশন করে। এছাড়া ছিলো দেশসেরা আবৃত্তিশিল্পীদের মনোজ্ঞ আবৃত্তি পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের প্রধান উপদেষ্টা আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বিশিষ্ঠ আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মোস্তফা। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি আহসান রনি ও সাধারণ সম্পাদক রাহাবার আলম।
দুপুর ২টা থেকে টিএসসি মিলনায়তনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত দল তাদের আবৃত্তি পরিবেশন শুরু করে। বিচারক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান এবং দেশসেরা আবৃত্তিশিল্পী শুক্লা দাশগুপ্ত ও মাহিদুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সংস্কৃতি চর্চায় সংস্কৃতির পরিমন্ডল তৈরি করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ নিয়মিতভাবে সংস্কৃতির বিচিত্র কর্মকান্ড চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী তার বক্তব্যে ইতিহাস থেকে রোমন্থন করে বলেন, ‘স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই এদেশে পথ নাটক ও আবৃত্তির আন্দোলন শুরু হয়।’
বিশিষ্ঠ আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মোস্তফা বলেন, ‘আবৃত্তি উৎসবের মত এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক বন্ধন পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী আয়োজনে আগত সকল অতিথি ও প্রতিযোগীদের এবং আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি আহসান রনি বলেন, ‘বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ আবৃত্তি উৎসবের মত সাংস্কৃতিক আয়োজন অব্যাহত রাখবে এবং বিশ্ব দরবারে বাঙ্গালী সংস্কৃতির পরিসর আর সমৃদ্ধ করতে প্রয়াস চালিয়ে যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারন সম্পাদক রাহাবার আলম তার বক্তব্যে শুদ্ধ সংস্কৃতিক চর্চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ সবসময়য় প্রচেষ্ট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ কাজ করে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে।
সংস্কৃতির একটি বড় স্থান দখল করে রেখেছে সাহিত্য; বিশেষ করে কবিতা। কবিতা আবৃত্তি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক মাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ বিশ্বাস করে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে খুবই গুরুত্বের সাথে আবৃত্তি চর্চা করে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি প্রতিভা অবলোকন করতে এবং তরুণ প্রজন্মকে আবৃত্তি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে তোলার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হলো “আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি উৎসব ২০১৭”।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় দলগুলোর মধ্যে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত আবৃত্তি দল মনোমুগ্ধকর দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনার মাধ্যমে নিজ নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে। এদের মধ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি দল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মাধ্যমে বিজয়ীর খেতাব অর্জন করে। একই সাথে উৎসবে সেরা আবৃত্তিকার হিসেবে যৌথভাবে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাবেরী সুলতানা জ্যোতি এবং বিইউএফটি- এর আজমেরী সুলতানা। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। নানা আয়োজনে মুখরিত ও দেশসেরা আবৃত্তিশিল্পীদের মিলনমেলার এই আয়োজনটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিলো
পাঠকের মন্তব্য