বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর বাসীর জন্য ছাত্র ইউনিয়নের ৯ দাবি

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওর পরিবেষ্টিত ৭টি জেলাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করার দাবিসহ ৯ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ। আজ ১৭ মে বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সহ সভাপতি সুমন সেন গুপ্ত, তুহিন কান্তি দাশ, সহ সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক দীপক শীল প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের ৭টি জেলার হাওর অঞ্চলে ৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আবাদ করা বোরো ধানের শতকরা ৮০ ভাগ তলিয়ে গিয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির পানির ঢলে। যার অর্থ মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পরিবেশ দূষণে মারা গেছে ২ হাজার মেট্রিক টন মাছ, ১০ হাজার হাঁস, হাওরের একমাত্র বোরো ধানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ২৪ লক্ষ পরিবার অর্থাৎ প্রায় এক কোটি মানুষ আজ এক অবর্ণনীয় মানবেতর পরিস্থিতির শিকার। একই সময়ে খাগড়াছড়ির সাজেকে চলছে দূর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। সাজেকে প্রতি কেজি চালের দাম ১৫০-১৮০ টাকা অর্থাৎ মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মানুষ ফায়দা হাসিল করার চেষ্টায় রত। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পুঁজিবাদী উন্নাসিকতার শিকার উপদ্রুত জনপদের মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার ইতিহাত অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে এবং যে কোন দূর্যোগকালীন সময়ে অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত জনমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সমগ্র দেশে হাওর অঞ্চলের ও সাজেকের আর্ত-মানুষের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ সহযোগিতা সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করেছে। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজারে হাকালুকি হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে তিন দফায় ৩ লক্ষ টাকার ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে গত ৫ মে ও ৬ মে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ও ময়মনসিংহ জেলা সংসদের উদ্যোগে ২ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১৯ মে কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি তুহিন কান্তি দাশের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম সুনামগঞ্জের শনির হাওড় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনশ পরিবারকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার সমমূল্যের ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান করবেন। এছাড়া সাজেকের আর্ত-মানুষের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম জেলা, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জনমানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার তুলনায় এটি নিতান্তই নগন্য।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন হাওর অঞ্চলের ও সাজেকের দুর্যোগ পীড়িত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এই ত্রাণ সহযোগিতা সংগ্রহ অভিযান আগামী ১০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে। পরবর্তীতে সংগৃহিত সহযোগিতা দূর্যোগ পীড়িত অঞ্চলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়েছে এবং এইচএসসি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে ইতোমধ্যে হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ঢাকায় ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে চলে যাচ্ছেন। এমনটি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই বাস্তবতায় আমরা হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছি। অবিলম্বে হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিতকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে হাওর অঞ্চলের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ভর্তি নিশ্চিত করা ও পরবর্তী বোরো মৌসুম পর্যন্ত তাদের অবৈতনিক শিক্ষার সুুযোগ প্রদান করার ঘোষণা দিতে হবে।

আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আপনাদের মাধ্যমে আবারো আমরা সমগ্র দেশের সকল অবস্থাপন্ন মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই, মানবিক বিবেক বোধ থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ত্রাণ সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করার জন্য।
সংবাদ সম্মেলন থেকে হাওর অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের রক্ষায় ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আমরা নিম্নলিখিত দাবি উত্থাপন করা হয়।
১ অবিলম্বে হাওর পরিবেষ্টিত ৭টি জেলা ও সাজেককে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করতে হবে।
২ হাওর অঞ্চলের এসএসসি কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে বিনা ফি’তে ভর্তির নিশ্চিত করা ও অবৈতনিক শিক্ষার অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩ অবিলম্বে হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তী বোরো মৌসুম পর্যন্ত সকল প্রকার কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে।
৪ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে ‘মহাজনি খাতক ঋণ’ ও এনজিও সমূহের ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ সমূহ মওকুফ করতে হবে।
৫ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সকল জলমহালের ইজারা পরবর্তী বোরো মৌসুম পর্যন্ত বাতিল করতে হবে এবং হাওরের অবাধ মাছ ধরার অধিকার প্রদান করতে হবে।
৬ সাজেক ও হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে সরকারি রেশনিং কর্মসূচির আওতায় নিতে হবে।
৭ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ নবায়ন করে সুদের হার কমিয়ে নতুন ঋন মঞ্জুর করতে হবে।
৮ সাজেক ও হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সুগম ও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও একবেলা খাবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রদান করতে হবে।
৯ হাওর অঞ্চলের ভয়াবহ দুর্যোগের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারী বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার বিষয়টি তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭, ২২:০৫
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন