‘উপকূল বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৩দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ২৬ এপ্রিল ২০১৭ বুধবার। ধানমন্ডির দৃক গ্যালারীতে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলছে। উপকূলের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ছবি নিয়ে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ - সিসিডিবি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী জয়ন্ত অধিকারী বলেন, “প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সিসিডিবি মানবিক সহায়তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে আছে। আমরা জানি, উপকূলের মানুষেরা বহু সংগ্রামে বেঁচে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবনকেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। সে কারণে তাদের দিকে নজর দিতে হবে। বিপন্ন উপকূলের চিত্র নীতিনির্ধারণী মহলে তুলে ধরে সংকট উত্তরণের পথ খুঁজতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন।”
রাজধানীতে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের অধিকাংশই বাস্তবে কখনোই উপকূল দেখেনি। সংবাদপত্র আর টেলিভিশনে হয়তো বিপন্নতার খবর দেখেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর পড়েছে। আবার কেউ হয়তো উপকূলের কোন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে গিয়েছে কোন এককালে। কিন্তু উপকূলের মানুষের দুর্দশার চিত্র সেভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি তাদের। রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে ‘উপকূল বাংলাদেশ আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ থেকে তারা জানতে পারলেন উপকূলের কিছু অজানা কাহিনী।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে আগত দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে বিষয়টি বোঝা গেলো স্পষ্টতই। জানালেন, এখানে এসে উপকূল নিয়ে তাদের ধারণাটাই আমূল বদলে গেছে। এতটা বিপন্নতায় মানুষ বসবাস করছে, তা কখনোই তারা কল্পনা করেননি। উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের নজর বাড়ানোর দাবি জানালেন তারা।
শ্যামা শারমিন রহমান পেশায় একজন ফার্মাসিষ্ট। গণমাধ্যমে খবর পেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন প্রদর্শনীতে। লক্ষ্য উপকূল বিষয়ে নিজের জানা এবং ছেলেদের জানানো। শ্যামা শারমিন বলেন, “উপকূলের মানুষেরা যে এতটা বিপন্নতায় আছে, সেটা আমাদের আগে জানা ছিল না। প্রদর্শনীর ছবিগুলো যেন তাদের দুর্দশার কথাই বলছে। উপকূলের মানুষগুলো অনেক সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন। তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত।”
শ্যামা শারমিনের এক ছেলে আশাজ সাদান। পড়ছে সানিডেল স্কুলের ৩য় শ্রেণীতে। ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখে বললো, “শহরে বসে আমরা কল্পনাই করতে পারছি না উপকূলের মানুষেরা কেমন আছেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওই এলাকার মানুষের ঝুঁকি যে বেড়ে যাচ্ছে তা এই ছবিগুলো দেখে বুঝতে পারছি। এখানে এসে উপকূলের জীবনযাত্রা বিষয়ে বেশ ধারণা পেলাম।”
কথা হচ্ছিলো আরেকজন দর্শনার্থী মৌমির সাথে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছেন। তিনি বললেন, “ছবি দেখে বুঝতে পারি, উপকূলের মানুষগুলো প্রকৃতিক সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। নগরে বসে আমরা যেটা ধারণা করতে পারিনা, এখানে এসে সে বিষয়ে অনেক ধারণা লাভ করলাম। ছবিগুলো এক একটি সুনির্দষ্ট বিষয়ের ওপরে ফোকাস করায় বিষয়গুলো দর্শকদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এভাবে উপকূলের বিভিন্ন ইস্যুতে বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলে উপকূলকে মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে।”
বিশিষ্ট আলোকচিত্রী নিজামউদ্দিন হায়দারও এসেছেন প্রদর্শনীতে। তিনি বললেন, “উপকূলের জন্য যে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, তা এই ছবিগুলোই বলে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের জীবনজীবিকায় কী ধরণের প্রভাব পড়েছে, জীবনযাপনে তাদেরকে কতটা লড়াই করতে হচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রদর্শনীর দেয়ালগুলোতে। প্রান্তিকের ছবিগুলো তুলে আনায় আমার বেশ ভালো লেগেছে, আবার মানুষের দুর্দশার চিত্রগুলো দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এমন একটি উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।”
ইউএই ভিত্তিক জিও টেলিভিশনের বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ সেলিম রেজা বলেন, “এটা দেখে ভালো লাগার মত কোন প্রদর্শনী নয়। এটা অনুধাবনের বিষয়। এই ছবি দেখতে সবাই আসবে না। উপকূলের ছবি নিয়ে ঢাকায় প্রদর্শনীর আয়োজন আমার জানামতে এটাই প্রথম। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। প্রদর্শনীর ছবিগুলোকে সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উপকূল নিয়ে ভালো প্রতিবেদন করতে পারে। উপকূলের ছবি নিয়ে এভাবে আরও প্রদর্শনীরআয়োজন করতে হবে। তাহলেই মানুষের মাঝে সচেতনতা আসবে। উপকূলের মানুষও ফিরে পাবে সুন্দর আগামী।”
উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে রফিকুল ইসলাম মন্টুর আলোকচিত্রের সাথে আরো চারজনের ছবি স্থান পেয়েছে। এরা হলেন, দীন মোহাম্মদ শিবলী, হাবিব তরিকুল ও নাইমুল ইসলাম। আজ ২৮ এপ্রিল শুক্রবার রাত ৮টায় ৩দিনব্যাপী চলা এই প্রদর্শনী শেষ হবে।
পাঠকের মন্তব্য