বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়ে ড্রোন

আতিয়া মহলের বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।
আতিয়া মহলের বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে ড্রোনসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী। ড্রোন ও এ ধরনের দূরনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনে এলোপাতাড়ি পড়ে থাকা গ্রেনেড ও বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।

আজ মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্রটি জানায়, আতিয়া মহলের যেখানে-সেখানে অবিস্ফোরিত অবস্থায় হাতে তৈরি গ্রেনেড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ ধরনের গ্রেনেড খুব বিপজ্জনক। বিশেষ করে যদি পিন খোলা অবস্থায় কোনো গ্রেনেড পড়ে থাকে, তাহলে যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেগুলো শনাক্ত ও উদ্ধার করা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তাই ড্রোন ও এ ধরনের দূরনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর আরেকজন কর্মকর্তা জানান, আপাতত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি দূরনিয়ন্ত্রিত একটি কোয়াডকপটার (ড্রোন) ব্যবহার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীরও নিজস্ব ড্রোন আছে। তবে সেগুলো ঢাকা থেকে আনতে সময় লাগায় এগুলো দিয়ে আপাতত চেষ্টা করা হচ্ছে।

সকাল থেকে আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলের অভিযান চলছে। অভিযান চলাকালে বেলা একটার দিকে চারটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

সকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, আতিয়া মহলের ভেতরে ঢুকেছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। সেখানে বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।

আতিয়া মহলের আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা আজও রয়েছে। আতিয়া মহল ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। গণমাধ্যমকর্মীরাও নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সেনা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, আতিয়া মহলে আর কোনো জঙ্গি জীবিত নেই। সবাই অভিযানে নিহত হয়েছে। সেখান থেকে একজন নারী ও একজন পুরুষের মৃতদেহ বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও দুটি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে, যাদের শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলার জন্য বিস্ফোরকভর্তি বন্ধনী) বাঁধা। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, আতিয়া মহলের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলেও সেখানে প্রচুর বিস্ফোরক বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই অভিযান শেষ হচ্ছে না।

আতিয়া মহল নামের পাঁচতলা এই বাড়ি গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় ঘিরে ফেলে পুলিশ। গত শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট গিয়ে অভিযানে অংশ নেয়। এরপর গত শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত এবং আরও ৪৪ জন আহত হন। গতকাল সকাল থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণ চলে। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর ব্রিফিংয়ে জঙ্গি অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।

সর্বশেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭, ১৪:১৮
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন