জয়ের সমন্বয়টা ভাঙতে নেই। ক্রিকেটের পৃথিবীতে খুব প্রচলিত কথা, জনপ্রিয়ও। কিন্তু কে কবে এটা অক্ষরে অক্ষরে মানতে পেরেছে?
ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যায়, উইকেটের চরিত্র পাল্টায়। ন্যাড়া উইকেট ছেড়ে ঘাসের আচ্ছাদন গায়ে মেখে সামনে দাঁড়ায় উইকেট। তীব্র দহনের পর হঠাৎ বৃষ্টির ছোঁয়ায় পাল্টে যায় পরিবেশ। দল তখন বদলাতেই হয়। বিরাট কোহলি ভারতকে এত এত রত্নখচিত সাফল্য এনে দিয়েছেন টেস্টে, অথচ একই দল নিয়ে টানা দ্বিতীয় টেস্টে তিনি নামেননি!
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির মুখেও কাল শোনা গেল, ‘আমরা গত দুই বছরে সব সময়ই উইনিং কম্বিনেশন ভেঙেছি। সুতরাং উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা যাবে না বা ধরে রাখতে হবে, এটা নিয়ে আমরা ভাবি না।’
অধিনায়কের কথায় ইঙ্গিত, ডাম্বুলায় আজ দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশ বদলাতেই পারে। শ্রীলঙ্কার একাদশ বদলাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর তীব্র তাড়না বা আকাঙ্ক্ষা তাদের বাধ্যই করছে এটি করতে। পরাজিত দল সব সময়ই এটা করতে চায়। তবে ঘটনা যা, দলবদলের আগে স্বাগতিক দল উইকেটটাও হয়তো বদলাচ্ছে। ২২ গজে সবুজের ছোঁয়া, সন্ধ্যার মুখে একটু পানি দেওয়া—কিসের ইঙ্গিত? সুইং বোলিংয়ের উপযোগী উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশের জয়ের রথ আটকে দেওয়ার কৌশল! মাশরাফি এ নিয়েও ভাবেন না। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ বোলিংয়েও ছিল শ্রেয়তর দল। এমনকি যে ফিল্ডিং ছিল একসময় শ্রীলঙ্কার উজ্জ্বল দিক, সেখানেও তারা ধূসর।
প্রথম ম্যাচের স্কোরকার্ড হয়তো দেখায়, মোস্তাফিজ বেশি রান দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বল খেলতে সমস্যাই হয়েছে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। অনেক সময় অনুমানের ওপর ব্যাট চালিয়েছেন চান্ডিমাল-পেরেরারা। তাসকিনের বল তো কখনো কখনো ঝরিয়েছে আগুন। দ্রুততম গতির বলটি (১৪৭ কিলোমিটার) বেরিয়েছে তাঁর হাত থেকেই। একই সঙ্গে মাশরাফি ও মিরাজ করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং।
মাশরাফি জানেন, শ্রীলঙ্কা সিরিজে ফিরতে মরিয়া। জেতার জন্য যত রকম কৌশল নেওয়া সম্ভব, সবই তারা নেবে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ম্যানেজার অশাঙ্ক গুরুসিনহা তো কাল সংবাদ সম্মেলনে বলেই গেছেন, এ ম্যাচ তাদের কাছে ‘ফাইনাল’। বাংলাদেশ অধিনায়কের অনুমান, উইকেটে কিছুটা ঘাস শেষ পর্যন্তও থেকে যেতে পারে। সবকিছুই পূর্বাপর ভেবে রেখেছেন তিনি, যে জন্য প্রস্তুত যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে, ‘বোলারদের আত্মবিশ্বাস আছে। উইকেট যা-ই হোক, আমরা তৈরি।’
প্রথম ম্যাচের উইকেটে কিন্তু পেস-স্পিন দুটিই কাজ করেছে। বাংলাদেশ দলে সমন্বয়টা দারুণ ছিল বলে সমস্যা হয়নি একেবারেই। দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট বদলে গেলে, কতটুকুই বা বদলাবে, দিন তো আর রাত হবে না। বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে খেলছে, বাড়তি একজন পেসার নেবে কি? নাকি একজন পেসার কমিয়ে বাড়তি একজন স্পিনার? সেসবের কোনো উত্তর নেই মাশরাফির কাছে। সকালে উইকেট দেখে তবেই সিদ্ধান্ত। যদিও বলে গেলেন, বাংলাদেশ জয়ী দলটিকেই ধরে রাখার ব্যাপারে রক্ষণশীল নয়। মাশরাফি আরও পিছিয়ে গিয়ে একটা বড় উদাহরণ দিতে পারতেন। যেটি হাথুরুসিংহে আসার নয় বছর আগের ঘটনা। সেই যে, ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ের পরও বাংলাদেশ পরিবর্তন এনেছিল জয়ী দলে। সেই ম্যাচের একাদশ থেকে নাফিস ইকবালকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল শাহরিয়ার নাফীসকে। ঘটনাচক্রে কার্ডিফের ওই ম্যাচটাই হয়ে গেছে নাফিস ইকবালের শেষ ওয়ানডে।
বাংলাদেশ জয়ের সমন্বয় ভাঙে আরও বড় জয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়। সেটি আজ ভাঙুক বা না ভাঙুক, আজ জিতলে সত্যিকারের এক বড় দলের বিপক্ষে তাদের মাঠেই হবে প্রথম সিরিজ জয়ের উৎসব। সচেতনভাবেই এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের প্রসঙ্গটা রাখা হচ্ছে দূরে। মাশরাফি এ কথাটাই হয়তো বলতে চেয়েও বলেননি।
পাঠকের মন্তব্য