“সয়াল্যান্ড লক্ষ্মীপুরে স্বাগতম”

যে দিকেই চোখ যায়, বিস্তৃত মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ।Junayed Al Habib
যে দিকেই চোখ যায়, বিস্তৃত মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ।
“আঁচলে মেঘনার মায়া ডাকাতিয়া বুকে, রহমতখালী বয়ে যায় মৃদু এঁকেবেঁকে। নারিকল-সুপারি আর ধানে ভরপুর, আমাদের আবাসভূমি প্রিয় লক্ষ্মীপুর”– এই বিখ্যাত প্রবাদটি দিয়ে জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও বর্তমানে “সয়াল্যান্ড” হিসেবেই পরিচয় বহন করে লক্ষ্মীপুর জেলা।

দেশের ৮০ ভাগ সয়াবিনের উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে কমলনগরকে ‘‘সয়াবিনের রাজধানী’’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর লক্ষ্মীপুর পরিচিতি পেয়েছে ‘‘সয়াল্যান্ড’’ হিসাবে।

“সয়াবিন” উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কৃষকদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবা স্বপ্নের ফসলও বলা যেতে পারে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সয়াবিন অনেক অর্থের যোগান দিয়ে কৃষকদের স্বাবলম্বী করে তোলে। সয়াবিন চাষে কৃষক-কিষাণীর মাঝে স্বপ্ন উঁকি দেয়। স্বপ্ন দেখে পরের প্রজন্ম।

সূত্র বলছে, এই উপজেলায় সয়াবিন চাষ শুরু হয় এবং উপজেলা জুড়ে এর বিস্তৃতি ঘটে। কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে গোটা জেলায়। এক সময় নজরকাড়ে জেলা প্রশাসনের। লক্ষ্মীপুর শহরের ঝুমুর ট্রাফিক মোড়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কে ত্রি-কোণাকৃতির পরিচয় জ্ঞাপক ফলক এরই প্রমাণ বহন করে। সেখানে লেখা রয়েছে — “সয়াল্যান্ড লক্ষ্মীপুরে স্বাগতম।” “আঁচলে মেঘনার মায়া ডাকাতিয়া বুকে, রহমতখালী বয়ে যায় মৃদু এঁকেবেঁকে। নারিকল-সুপারি আর ধানে ভরপুর, আমাদের আবাসভূমি প্রিয় লক্ষ্মীপুর”– এই বিখ্যাত প্রবাদটি দিয়ে জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও বর্তমানে “সয়াল্যান্ড” হিসেবেই পরিচয় বহন করে লক্ষ্মীপুর জেলা।

কেনই বা কৃষকদের মাঝে সয়াবিন চাষে এতটা উৎসাহ– এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় কৃষক মোঃ আবদুল গণি জানান, “অতি অল্প সময়ে, অল্প খরচে প্রতি বিঘা জমিতে ৪-৫ মণ সয়াবিন পাওয়া যায় এবং যার বর্তমান বাজার মূল্য ৯০০টাকা। যা অন্যান্য ফসলের সঙ্গে তুলনা করা কঠিন।”

শুধু কমলনগর নয়, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রামগতি, রায়পুর, রামগঞ্জ এলাকার কৃষকরা সয়াবিন চাষে অভাব-অনটন দূর করার স্বপ্ন দেখছে।

কৃষকেরা জানান, উপকূলীয় অঞ্চলভূক্ত এ জেলা মেঘনায় সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভাসে। একইসঙ্গে জোয়ারের সাথে আসা পলিমাটি এই অঞ্চলের জমি বেশ উর্বর করে তোলে। সেই উর্বরতার সুবাদেই হয়তো এক সময় সয়াবিন চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং তা সফলও হয়। ঋতুর পালাবদলে এই সময়ে কৃষকেরা সয়াবিন চাষে ব্যস্ত সময়পার করেন। হাল চাষের মাধ্যমে জমিতে সবচেয়ে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ও আগাছানাশক ঔষধ প্রয়োগ করে সয়াবিন রোপণ করা হয়। কিছুদিন পর সয়াবিন যখন বড় হতে থাকে, তখন সয়াবিনের সবুজ রঙে পরিবেশ মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে। যে দিকেই চোখ যায়, বিস্তৃত মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ।

দৃষ্টিনন্দন সবুজের সমারোহের মাঝেও কৃষক থাকেন আতংকে। কারণ, এ সময়ে সয়াবিনের ফসল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন শুরু হয়। কৃষকরা তখন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘‘কৃষি ডাক্তারদের’’ কাছে ছুটেন কীটনাশকেন জন্য। এই মুর্হুতে ফসলের প্রতি কৃষক এতটুকু অবহেলা দেখালে সকল আশা নিরাশায় পরিণত হবে। এজন্য উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের মাধ্যমে পানিসহ কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন সয়াবিনচাষীরা।

এ বিষয়ে কমলনগরের ৪নং চরমার্টিন ইউপি সদস্য ও স্থানীয়ভাবে ‘‘কৃষি ডাক্তার’’ হিসাবে পরিচিত মোঃ নুরুল ইসলাম পারভেজ বলেন. “অন্যান্য সময়ের তুলনায় সয়াবিন ফসল চাষকালে কৃষকরা প্রচুর সার ও কীটনাশক ক্রয় করে থাকেন। এতে করে কৃষকদের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ আরো একধাপ এগিয়ে যায়।”

সর্বশেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩০
জুনাইদ আল হাবিব
কমলনগর প্রতিনিধি

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন