মহান স্বাধীনতা দিবসের মত একটি জাতীয় দিবসকে শুধুমাত্র কয়েকটি দেয়াল পত্রিকা কীভাবে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে পারে, তারই প্রমাণ মিলল ভোলার আবদুর রব স্কুল এন্ড কলেজে। স্বাধীনতার কথা খুদে পড়ুয়ারা লিখলো নিজেদের ভাষায়। দেয়াল পত্রিকা বেলাভূমি নিয়ে পড়ুয়ারা ঘুরলো এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বিদ্যালয় চত্বর।
আবদুর রব স্কুল এন্ড কলেজে বেলাভূমি প্রকাশের সবথেকে ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে, এখানে একসাথে প্রকাশিত হয়েছে ১৪টি দেয়াল পত্রিকা। শুধু উপকূল অঞ্চল নয়, বাংলাদেশের কোথাও এর আগে একসাথে এতগুলো দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের কোন নজির নেই। স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের এই অভাবনীয় উদ্যোগের অন্যতম অংশীদার প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মিসেস সাফিয়া খাতুন আর শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। তাদের আন্তরিকতা আর প্রচেষ্টায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। একসাথে প্রকাশিত ১৪টি বর্ণিল বৈচিত্রময় দেয়াল পত্রিকা স্কুলের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে করেছে নজরকাড়া আকর্ষনীয় আর বৈশিষ্টমন্ডিত।
ষষ্ট শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে বের করেছে বেলাভূমি’র ‘স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা’। উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নিজেদের লেখা প্রতিবেদন, গল্প ও কবিতা প্রকাশ করে। সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছে নিজেরাই।
উপকূলের স্কুলগুলোতে প্রতিবছরই বিভিন্ন সময়ে এক বা একাধিক বিষয়বস্তু নিয়ে প্রকাশিত হয় দেয়াল পত্রিকা “বেলাভূমি”। এসব পত্রিকায় লেখালেখি, সম্পাদনা ও পত্রিকা তৈরীর পুরো কাজটা করে স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। পত্রিকা প্রকাশে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করে থাকেন।
উপকূলের স্কুলগুলোতে এই দেয়াল পত্রিকা তৈরীর গল্পটা আরো পেছনের। ২০১২ সালে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু সম্পূর্ন একক প্রচেষ্টায় উপকূলের স্কুলগুলোতে শুরু করেন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়াল পত্রিকা “বেলাভূমি” তৈরীর রেওয়াজ। এ লক্ষ্যে স্কুলগুলোতে তিনি গঠন করেন আলোকযাত্রা দল। এই দলের সদস্যরা দেয়াল পত্রিকা তৈরী ও প্রকাশের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের সহযোগী হয়।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন এই উদ্যোগ?
রফিকুল ইসলাম মন্টুর ভাষায়, “এই উদ্যোগের সঙ্গে উপকূলের তরুণদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, যারা বহুমূখী সমস্যার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠছে। লেখালেখিতে সম্পৃক্ত হয়ে ওদের কোমল মননে আসবে নতুন চিন্তা। ওরা ভাবতে শিখবে, কথা বলতে শিখবে, মত প্রকাশের সুযোগ পাবে। সামাজিক পরিবর্তনে, বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে রাখতে পারবে বিশেষ ভুমিকা। যেকোন বিষয় লিখতে গিয়ে ওদের জানার পরিধিও অনেক বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে তারা যুক্ত হবে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে, যেটা ওদের আগামী জীবনের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।”
বেলাভূমির জন্যে তৈরী করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইট। এখানে আছে আলোকযাত্রা দল ও বেলাভুমির বিভিন্ন খবর। পাশাপাশি রয়েছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন লেখা।
আলোকযাত্রা দল বেলাভূমি প্রকাশের পাশাপাশি নিজ এলাকায় বৃক্ষরোপণ, রাস্তা সংস্কারের মতো বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীও পালন করছে।
পাঠকের মন্তব্য