সিলেটের আতিয়া মহলে ৪৮ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি অভিযান

সিলেট নগরের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের গতকাল উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। সন্ধ্যায় পাঠানপাড়ার একটি বাড়িতে সংবাদকর্মীদের সামনে আনা হয় তাদের lProthom Alo
সিলেট নগরের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের গতকাল উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। সন্ধ্যায় পাঠানপাড়ার একটি বাড়িতে সংবাদকর্মীদের সামনে আনা হয় তাদের l
অপারেশন শুরুর পর থেকে দিনভর থেমে থেমে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পরপর দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। বেলা দুইটার একটু পরে আবার গুলি হয়। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার কাছে বেলা দুইটার একটু পর থেকে প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা কোনো শব্দ হয়নি। বিকেল পাঁচটা থেকে আবার গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির সেই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ হয়নি। গতকাল শনিবার রাত দুইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই আস্তানার ভেতরে কতজন সন্দেহভাজন জঙ্গি আছে, তাদের কী অবস্থা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী জানায়, অভিযান চলমান রয়েছে, বাড়িটিতে বিস্ফোরক (আইইডি) পেতে রাখা হয়েছে। তাই বলা যাচ্ছে না অভিযান কখন শেষ হবে।
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। বেলা সোয়া একটার মধ্যে ওই বাড়ির ২৮টি ফ্ল্যাটে আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন সেনাসদস্যরা। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু। তাদের পাঠানপাড়ার একটি বাসায় রাখা হয়।

এসব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে আতিয়া মহল নামের পাঁচতলা বাড়িটিতে পুলিশের অভিযান শুরুর পর থেকে আটকা ছিল। এই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। গত শুক্রবার দিনভর পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের দফায় দফায় আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিল। জঙ্গিরা তাতে সাড়া না দিয়ে ভেতর থেকে গুলি, বোমা ছোড়ে। তখন জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে এক নারী চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সোয়াট পাঠান, আমাদের সময় কম।’

গতকাল সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ফোর্স। সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু হয়। পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট অভিযানে নিরাপত্তা সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা মূল অভিযান চালাচ্ছেন। সকাল নয়টার দিকে অভিযান শুরুর পরপর হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আসে। মেঘলা আকাশের কারণে এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি থামে।

অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর আগে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরে যেতে বলে পুলিশ।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের এক কর্মকর্তা উদ্ধারকাজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল আতিয়া মহলের ২৮টি ফ্ল্যাট থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনছে। আতিয়া মহল ও এর পাশের ‘আতিয়া মহল-২’ নামের আরেকটি ভবনের মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের মই দিয়ে সেতু তৈরি করা হয়। এই পথে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। সে সময় ফায়ার সার্ভিসকে বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়।

সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, আতিয়া মহলে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারকাজ শেষের পথে। বেলা সোয়া একটার দিকে উদ্ধারকাজ শেষ হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এর আগে আতিয়া মহল প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ঢুকতে দেখা যায়।

অপারেশন শুরুর পর থেকে দিনভর থেমে থেমে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পরপর দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। বেলা দুইটার একটু পরে আবার গুলি হয়। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার কাছে বেলা দুইটার একটু পর থেকে প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা কোনো শব্দ হয়নি। বিকেল পাঁচটা থেকে আবার গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় শিববাড়ির কাছেই পৈতপাড়া এলাকার বসন্ত মালাকারের ছেলে শিবুল আহত হন। তিনি ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

অভিযান চলছে, বিস্ফোরক পেতেছে জঙ্গিরা
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আতিয়া মহলের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন সেনাবাহিনীর ঢাকা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফখরুল আহসান। অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের অপারেশন চলমান রয়েছে। অপারেশন শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে। আপনারা জানেন, জঙ্গিরা এখানকার যে বাড়িতে আছে, তারা সংগঠিত ও যথেষ্ট শক্তিশালী। সোয়াট এসেছিল, চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু জঙ্গিরা অনেক বেশি প্রস্তুত ছিল। শুক্রবার রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিকের প্রথম প্যারা কমান্ডের অপারেশন করার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে অপারেশন শুরু হয়।’

অপারেশন চলাকালে জঙ্গিরা ১০ থেকে ১২টি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জানিয়ে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, পাঁচতলা ওই বাড়িতে ২৯টি ফ্ল্যাট। ১৫০টি কক্ষ। পুরো ভবনে আইইডি (বিস্ফোরক) লাগানো ছিল। এ কারণে অপারেশন শেষ কবে নাগাদ হবে—বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৩:৩২
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন