সেনাবাহিনীর ব্রিফিংস্থলের কাছে বিস্ফোরণ, আহত কয়েকজন

অভিযান চলাকালে সেনাসদস্যরা।Anis Mahmud
অভিযান চলাকালে সেনাসদস্যরা।

সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলের’ কাছে আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সাংবাদিকসহ আশপাশের অন্তত কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে কয়েক মিনিট আগেই সেনাবাহনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়েছিল।

অভিযানে থাকা সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান ব্রিফিংয়ে বলেন, তারা ওই ভবন থেকে ৭৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ভেতরে জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে। তাই তাদের অভিযান চলমান আছে। কাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান সমাপ্ত করা হবে। আজ অভিযান চলাকালে জঙ্গিরা ১০-১২টি শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে।

এর আগে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে আহত অবস্থায় শিবুল মালাকার (২৭) নামের একজনেক সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার কাছে বেলা দুইটার একটু পর থেকে প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা এমন কোনো শব্দ হয়নি। বিকেল পাঁচটা থেকে আবার গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় অনেকক্ষণ। এর আগে ওই বাড়ির প্রাঙ্গণে ঢুকেছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শিববাড়ির কাছেই পৈতপাড়া এলাকার বসন্ত মালাকারের ছেলে শিবুল। তিনি ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর ফটো স্টুডিওর ব্যবসা আছে। অভিযান চলাকালে তিনি আহত হন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, আহত ব্যক্তিকে বেলা পৌনে তিনটার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তির শরীরের পেছনের দিকে গুলি লেগেছে। তাঁর অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের চারতলায় সার্জারি ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে আছেন।

আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারের কাজ শেষ বলে বেলা সোয়া একটার দিকে জানিয়েছেন জালালাবাদ সেনানিবাসের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের এক কর্মকর্তা।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে উদ্ধারকাজের বর্ণনা দিয়ে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল আতিয়া মহল নামের ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বের করে আনে। আতিয়া মহল ও তার পাশের আতিয়া মহল-২ নামের আরেকটি ভবনের মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের মই দিয়ে সেতু তৈরি করা হয়েছে। এই পথে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাসিন্দাদের বের করা হচ্ছে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসকে বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে।

সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পরপর দুটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। এলাকার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

জালালাবাদ সেনানিবাসের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের কর্মকর্তা সকাল সাড়ে নয়টার একটু পরই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে এই অভিযান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে হচ্ছে। পুলিশ ও সোয়াট সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা মূল অভিযান চালাচ্ছেন। ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অভিযান শুরু হওয়ার পরই ওই এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার পর বৃষ্টি থেমে যায়।

সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ফোর্স।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের সাঁজোয়া যান ও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চালানো অভিযানেও অংশ নিয়েছিল সিলেটের জালালাবাদ থেকে যাওয়া সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল।

জঙ্গিরা অবস্থান করছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পাঁচতলা বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। গতকাল দিনভর বারবার মাইকে আহ্বান জানিয়েও ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ভেতর থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। অভিযান চালাতে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটের একটি দল গতকাল বিকেলে সিলেটে পৌঁছায়। রাতভর বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়।

পুলিশের ধারণা, আতিয়া মহল নামের বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে। ভেতরে একজন নারী থাকার কথা নিশ্চিত হলেও মোট কতজন আছেন, সেটা জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, ভেতরে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাইনুল ওরফে মুসা রয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭, ১৯:২৭
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন