একটা দিনই গেল মেহেদী হাসান মিরাজের! সেই সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। কখনো বাস, কখনো বিমান—সারাটা দিন পথে পথেই কেটেছে তাঁর। ডাম্বুলার আলিয়া রিসোর্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাল রাত প্রায় ১২টা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশের ঠিকানা আপাতত এখানেই।
টেস্ট সিরিজের পর শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরেই মিরাজ ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন খুলনায়। কদিনের বিশ্রাম শেষে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা কক্সবাজারে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে। কক্সবাজার নয়, সংক্ষিপ্ত ছুটি শেষে তাঁর গন্তব্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। হঠাৎই বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন মিরাজ। টিম ম্যানেজমেন্টের জরুরি তলবে হন্তদন্ত হয়ে তাঁকে খুলনা থেকে আসতে হয়েছে ঢাকায়। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোরও সুযোগ পাননি, শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছেই ধরতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার ফ্লাইট। সন্ধ্যায় কলম্বোয় পৌঁছেই রওনা দিয়েছেন ১৮০ কিলোমিটার দূরের ডাম্বুলায়।
গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট সিরিজেই হইচই ফেলে দিয়েছেন মিরাজ। ৭ টেস্টে ৩৫ উইকেট নিয়ে এরই মধ্যে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী অফ স্পিনার। টেস্ট আর ওয়ানডের বোলিং করার ধরন আলাদা বলে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা ছিল, আপাতত মিরাজকে ওয়ানডে না খেলানোর। কিন্তু হঠাৎই পরিবর্তন হয়েছে এই পরিকল্পনার।
ওয়ানডে দলে মিরাজের আকস্মিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাল মুঠোফোনে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বললেন, ‘শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে দলে বেশ কজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে। একজন বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের চাহিদা অনুযায়ীই মিরাজকে দলে নেওয়া হয়েছে।’
‘বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া’ বলতে এখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাওয়াকেই বোঝায়। তবে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও মিরাজকে দলে চেয়েছেন। ইমার্জিং কাপের বাংলাদেশ দলে মিরাজের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন আরেক অফ স্পিনার নাঈম হাসান। তবুও মিরাজ থাকলে দলটা নিশ্চয়ই আরও শক্তিশালী হতো। বিসিবির প্রধান নির্বাচক এখানে জাতীয় দলের প্রয়োজনীয়তাকেই বড় করে দেখছেন, ‘মিরাজ না থাকায় ইমার্জিং টিমটা একটু দুর্বল তো হয়েছেই। তবে সবার আগে তো জাতীয় দলের প্রয়োজনীয়তাই আমাদের দেখতে হবে।’
মিরাজের অন্তর্ভুক্তিতে শ্রীলঙ্কা থেকে কাউকে আপাতত ফিরতে হচ্ছে না। তাঁকে নিয়ে ওয়ানডে দলটা দাঁড়িয়েছে ১৭ সদস্যের। কাল সকাল নয়টায় কলম্বো থেকে রওনা দিয়ে মাশরাফিরা চার ঘণ্টার বাসযাত্রা শেষে ডাম্বুলায় পৌঁছেছেন বেলা দেড়টার দিকে। টেস্ট সিরিজটা সমুদ্রবর্তী দুই শহরে খেললেও বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে পাহাড়ি এলাকা ডাম্বুলায়। শহরটা শ্রীলঙ্কার ঠিক মাঝখানে।
ডাম্বুলায় পৌঁছে নিজেদের মতো করেই সময়টা কাটিয়েছেন খেলোয়াড়েরা। মূলত হোটেলেই বিশ্রাম নিয়েছেন তাঁরা। আজ সন্ধ্যায় রনগিরি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলোয় অনুশীলন করবে বাংলাদেশ। এই মাঠে বাংলাদেশের কোনো সুখস্মৃতি নেই। ২০১০ সালে এশিয়া কাপে তিন ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই হার। তবে এবার ছবিটা একটু ভিন্ন। কদিন আগেই শততম টেস্ট জয়, আর গত দুই বছরে ওয়ানডেতে ধারাবাহিক সাফল্যজাত আত্মবিশ্বাস রনগিরিতে রঙিন গল্প লেখারই প্রেরণা জোগাবে মাশরাফিদের।
শ্রীলঙ্কা সফরের বাকি সূচি
- ২৫ মার্চ ১ম ওয়ানডে (ডাম্বুলা) বেলা ৩:৩০ মি.
- ২৮ মার্চ ২য় ওয়ানডে (ডাম্বুলা) বেলা ৩:৩০ মি.
- ১ এপ্রিল ৩য় ওয়ানডে (কলম্বো) সকাল ১০:০০ মি.
- ৪ এপ্রিল ১ম টি-টোয়েন্টি (কলম্বো) সন্ধ্যা ৭:৩০ মি.
- ৬ এপ্রিল ২য় টি-টোয়েন্টি (কলম্বো) সন্ধ্যা ৭:৩০ মি.
* বাংলাদেশের সময়
পাঠকের মন্তব্য