বাসা ভাড়া নেওয়ার নাম করে ঘরে ঢোকেন এক তরুণীসহ চারজন। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে জানান, বাসা তাঁদের পছন্দ হয়েছে। এখন থেকেই থাকতে চান তাঁরা। রাজি হয়ে যান তত্ত্বাবধায়কও। ঘটনার শুরু এভাবেই। এর তিন ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তরুণীসহ তিনজন। চতুর্থজনের লাশ পাওয়া যায় বাসার টয়লেটে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়।
না, এটি ভৌতিক কোনো ছবির কাহিনি নয়। বাস্তবেই ঘটেছে চট্টগ্রামে। বুধবার বিকেল থেকে ঘটনার শুরু। এর মধ্যে নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাঁর নাম মো. আলাউদ্দিন (২৪)। পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্রেমসংক্রান্ত কারণে খুন হতে হয়েছে আলাউদ্দিনকে।
চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে এক কিলোমিটার পূর্বদিকে পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় রাস্তার পাশে চারতলা একটি বাড়িতে বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় হাজির হন ওই চারজন। বাড়ির নিচতলায় তত্ত্বাবধায়ক হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বাড়ির তৃতীয় তলার খালি ফ্ল্যাটটি দেখতে চান তাঁরা। বাসা দেখে পছন্দ হওয়ার কথা জানান তাঁরা। চারজনের পরিচয়ও দেন। দুজন স্বামী-স্ত্রী। বাকি দুজন বন্ধু। থাকবেন স্বামী-স্ত্রী। এর আগের দিন বিকেলে ওই চারজনের একজন (নিহত যুবক নয়) ফ্ল্যাট খালি আছে কি না, তা জানতে আসেন। তবে বাসার ভেতরে ঢোকেননি।
হাসিনা আক্তার বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে বলেন, ভাড়া নিতে আসা যুবকদের একজন জানান, ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। তাঁরা পাশের এলাকা হামজারবাড়ের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে আজই এ বাসায় উঠতে চান। মালামাল পরে আনবেন। মাসে ভাড়া সাড়ে সাত হাজার টাকা। এরপর তিনি রাজি হন। তাঁদের একজন বাসা পরিষ্কার করার জন্য তাঁর কাছ থেকে বালতিও চেয়ে নেন।
হাসিনা আক্তার বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিন যুবকের মধ্যে একজন বাসার নিচতলায় তাঁর কাছে বালতি ফেরত দিয়ে বেরিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ আগে স্বামী-স্ত্রী পাশের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করার জন্য বেরিয়ে যান। রাত আটটার দিকে তিনি নিচতলা থেকে তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখেন, ফ্ল্যাটটির দরজা খোলা। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভেতরে ঢোকেন। দেখেন বাসার টয়লেটের ভেতর হাত-পা বাঁধা লাশ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বামীকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
পশ্চিম শহীদনগর এলাকাটি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আওতাভুক্ত। ঘটনার পর থেকে হাসিনা বেগম ও তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাঁর স্বামী বাসার পাশে একটি পানের দোকান চালান।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাড়ির মালিক ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী আবু সৈয়দ। তাঁর অবর্তমানে বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা। বাসার নিচতলায় তাঁরা থাকেন। প্রতিটি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। ভাড়াটের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সঠিক নাম-ঠিকানা না নিয়ে কেন ভাড়া দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা বলায় মানবিক কারণে তাঁরা রাজি হয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। দুই মাসের আগাম ভাড়াও তাঁরা দিয়ে দেবেন বলেছিলেন।
নিহত আলাউদ্দিনের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। তাঁর বাবা শাহ আলম আগে দুবাই ছিলেন। চার বছর আগে দেশে ব্যবসা শুরু করেছেন। গতকাল বিকেলে বায়েজিদ থানায় তিনি বলেন, আলাউদ্দিন কুলগাঁও এলাকায় বন্ধু সাদেকের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় এবং মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তিনি দুশ্চিন্তা শুরু করেন। পরে রাতেই কুলগাঁও চলে আসেন। তাঁদের বাড়ি থেকে কুলগাঁও ছয় কিলোমিটার দূরে। সেখানে আলাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাদেক হোসেনের বাসা। এখানে এসে জানতে পারেন, আলাউদ্দিন আসেনি।
শাহ আলম বলেন, তাঁর ছেলে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কেন তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে তিনি বুঝতে পারছেন না। আশায় ছিলেন, ছেলে আর কিছুদিন পর চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। এখন তাঁর সব শেষ হয়ে গেছে।
বন্ধু সাদেক হোসেন বলেন, কলেজে পড়ার সময় এক মেয়ের সঙ্গে আলাউদ্দিনের প্রেম ছিল। পরে ওই মেয়ের বিয়ে হয়। আবার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে দুজনের আবার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুহসীন বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া যুবক ও খুনিরা পূর্বপরিচিত। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করেন। কী কারণে আলাউদ্দিনকে খুন করা হয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য