সব্যসাচী নিলয়: স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ ও তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভিত্তি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হলো ‘৩য় চলচ্চিত্র উৎসব’। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত উৎসবটি সাজানো ছিল নানা আয়োজনে।
উৎসবের প্রথম তিন দিন (২৩ থেকে ২৫ এপ্রিল) চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলোচনা সভা এবং শেষদিন (২৬ এপ্রিল) পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এবারের আসরে বিশ্বের ১১১ টি দেশ থেকে স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ৩,০৩৬ টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে বাছাইকৃত ৯৬ টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, চলচ্চিত্র নির্মাতা আশরাফ শিশির, ভারতীয় নির্মাতা অর্ণব মিদ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব, ভারতীয় সাংবাদিক সন্দীপ রায় চৌধুরী, সিলেট জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বরুপ আনন্দ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মিঠু চৌধুরী, কৃষি প্রকৌশল ও কারগরি অনুষদের ডিন সানজিদা পারভীন রিতু, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি মোনায়েম হোসেন, সহ-সভাপতি উত্তম কুমার, পল্লব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন শাওন প্রমুখ।
বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় অর্ণব মিদ্য পরিচালিত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘অন্দরকাহিনী’। বাংলাদেশে অন্দরকাহিনী’র প্রথম প্রদর্শনী এটি। বিকেল ৫টায় প্রদর্শিত হয় আমন্ত্রিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বেঙ্গলি বিউটি’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন রাহশান নূর।
অন্যদিকে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের যৌথ উদ্যোগে উৎসব প্রাঙ্গনে শিশুদের জন্য ৫৪ টি আলোকচিত্র নিয়ে ‘বায়োস্কোপ ৩’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আলোকচিত্রের পাশাপাশি ছিল চলচ্চিত্র সংসদের সদস্যদের হাতে আঁকা চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। এছাড়াও পর্দায় দেখানো হয়েছিল বেশ কয়েকটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন সকালে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে ‘চলচ্চিত্রে অভিনয়ের নানা দিক’ আলোচনা করেন অভিনেতা মনোজ কুমার প্রামাণিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মুক্তাদির ইবনে সালাম। এরপর দুপুর ৩টায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জীবনের ওপর নির্মিত মুক্তাদির ইবনে সালাম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রঙ্গের দুনিয়া’ এবং বিকেল ৫টায় বিজন ইমতিয়াজ পরিচালিত ‘মাটির প্রজার দেশে’ চলচ্চিত্র দুটি প্রদর্শিত হয়।
‘স্বাধীন মানুষ, স্বাধীন চলচ্চিত্র’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের তৃতীয় দিন। কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আরশাদুল ইসলাম, মোনায়েম হোসাইন, সালাউদ্দিন শাওন, উত্তম কুমার, স্বস্তি রাজেশ্বরী।
এবারের উৎসবে মোট ৯টি বিভাগে পুরষ্কার দেয়া হয়। কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে শেষ দিন সন্ধ্যায় পুরষ্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (বাংলাদেশি) বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ফারহা জাবিন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ড্রিড’, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (আন্তর্জাতিক) বিভাগে ভারতীয় নির্মাতা শ্রীরাম এসজি পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘খিলুয়ানা’। শ্রীরাম এসজি একইসঙ্গে সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটারের পুরস্কারও পেয়েছেন একই চলচ্চিত্রের জন্য।
এছাড়া সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ভারতীয় নির্মাতা বিজয় চৌধুরী পরিচালিত ‘ক্ষত’। শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে সেরা হয়েছে ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত ‘নীল’। ‘ইতিবৃত্ত কিংবা বাস্তবতার পুনরারম্ভ’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার পেয়েছেন সুমন সরকার। ‘কথক মায়া’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা সম্পাদক হয়েছেন দেবাশীষ দাস। শুভ্রা গোস্বামী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা’তে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মৌসুমী হামিদ এবং শরত পারাইল পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ফিলিংস’-এ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন চন্দন সিং রাজপুত। জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আশরাফ শিশির, অভিনেতা মনোজ কুমার প্রামাণিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা মুক্তাদির ইবনে সালাম ও ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক সিদ্ধার্থ মাইতি।
বিজয়ী ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নাজিম উদ্দিন আহমেদ, চলচ্চিত্র সংসদের উপদেষ্টা শহীদুল্লাহ কায়সার, সরকার মো. ইব্রাহিম খলিল ও তৌফিকুর রহমান।
উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল বিপনীবিতান ‘মাহা’। প্রতিবারের মতো সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবে এবারো প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসব পরামর্শক প্রেমেন্দ্র মজুমদার।
পাঠকের মন্তব্য