র্যাব সদর দপ্তরের ফোর্সেস ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের পর নিহত মো. হানিফ মৃধাকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে দাবি করছে পরিবার। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। এখনো খোঁজ নেই তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু মো. সোহেল হোসেন মন্টুর।
এ ব্যাপারে র্যাব-১-এর লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকাল শুক্রবার বলেছিলেন, র্যাব সদর দপ্তরের ফোর্সেস ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার দিন মুন মুন কাবাবের পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল। র্যাবের গাড়ি দেখে পালানোর সময় সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব অফিসে নেওয়ার পরই বুকে ব্যথা শুরু হলে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
হানিফের গাড়ির ব্যবসা ছিল। তাঁর তুরাগ পরিবহনের তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। তাঁর বাড়ি বরগুনার আমতলীর আমড়াগাছিয়ায়। আর সোহেলের গুলশান-২ নম্বরে পুরোনো ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে।
রায়েরবাজারে হানিফের বাসায় তাঁর স্ত্রী মো. কুলসুম বেগম বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বরিশালে চরমোনাই পীরের মাহফিলে গিয়েছিলেন হানিফ ও সোহেল। সেখান থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁরা লঞ্চে ফিরে আসেন। নামেন কাঁচপুর সেতুর কাছে। তাঁদের আনতে প্রাইভেট কার নিয়ে যায় চালক জুয়েল। সেখানে গিয়ে জুয়েল দেখতে পান সাত-আটজন নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে হানিফ ও সোহেলকে হাইয়াস গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আর কয়েকজন এসে প্রাইভেট কারে উঠে জুয়েলকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালাতে বলে। এরপর তারা জুয়েলকে মারধর করে পূর্বাচলে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনায় হানিফের ভাই মো. হালিম মৃধা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪ মার্চ জিডি করেন। হালিম বলেন, গত বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে র্যাব-১–এর একটি গাড়ি ও সাদা রঙের একটি হাইয়াস গাড়ি তাদের বাসায় আসে। রায়েরবাজার শাহ আলী গলির মুখে র্যাবের গাড়িটি দাঁড়ায়। আর সাদা গাড়িটি বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। সাদা গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন হানিফকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ঢোকে। এরপর বাসার লোকজনের সামনে কুলসুমকে বলে, আপনার স্বামী একটি অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেছে। এরপর হানিফের ব্র্যাক ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের চেক বই এনে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেকে সই করিয়ে নেয়।
হানিফের বেয়াই রেজাউল ইসলাম বলেন, বাসায় আসা লোকজনের মধ্য একজনের গায়ে র্যাবের পোশাক ও হাতে অস্ত্র ছিল। তাঁর বুকের মধ্যে নেমপ্লেটে ইকবাল লেখা ছিল। এ ছাড়া আর কারও নাম-পরিচয় জানানো বা বলা হয়নি। হানিফকে সঙ্গে নিয়ে আবার চলে যায়। যাওয়ার সময় বাসায় রাখা পালসার ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার তারা টেলিভিশনে জানতে পারে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে হানিফ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তখন তাঁরা সেখানে যান। পরিচয় দেখে নিশ্চিত হন এই ব্যক্তি তাঁদেরই হানিফ।
বিমানবন্দর থানায় গেলে পরিদর্শক (তদন্ত) এজাজ শফী মোবাইল থেকে লাশের ছবি দেখালে তাঁরা হানিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। ময়নাতদন্তের পর লাশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে সোহেলের বড় মামা মো. বাবু মোবাইলে জানান, সোহেলের বাড়ি বরগুনার তালতলীর ছোট বাইজরাতে। এখানে যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে থাকতেন। এখনো তাঁর কোনো খোঁজ নেই।
পাঠকের মন্তব্য