সবাই একসাথে মাথার হ্যাট (টুপি) খুলে ছুড়ে মারলেন আকাশের দিকে। সেই টুপি ধরতে লাফ দিলেন কেউ কেউ। আর সাথে সাথেই ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেলো মুহুর্তটি। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা সকল গ্রজুয়েটরাই এমন স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন পুরনো বন্ধুদের সাথে আবার এক হয়ে টাই, গাউন আর হ্যাট পড়ে সমাবর্তনে অংশ নেয়ার। সেই স্বপ্ন এবার ধরা দিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৬ হাজার ১৪ জন গ্রাজুয়েটদের।
আজ (শনিবার) রাবির দশম সমাবর্তন। সমাবর্তনে অংশ নিতে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে পৌছে গেছেন সকল নিবন্ধিত গ্রাজুয়েটরা। সাবেক শিক্ষার্থীদের পদচারণায় তাই প্রান ফিরে পেয়েছে রাবি। শুক্রবার থেকেই ক্যাম্পসের সর্বত্র যেনো গ্রাজুয়েটদের মিলনমেলা বসেছে। পুরনো বন্ধুদের পেয়ে সবাই যেনো আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছেন। ক্যাম্পাস মাতিয়ে তোলার দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছেন সবাই। পুরনো বন্ধুদরে সাথে আবার একসাথে বসে গল্প করার সুযোগ পেয়েছেন সবাই। সাবেকদের এমন গর্বিত পদচারণায় যেনো উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পুরা ক্যাম্পাস জুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, স্টেডিয়াম, প্যারিস রোড, শহিদ মিনার, সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্য, সকল বিভাগ, সকল আবাসিক হলের সামনে গ্রাজুয়েটরা ছবি তুলতে ব্যস্ত। কখনো সবাই মিলে ছবি তুলছেন আবার কখনো একা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জায়গায় পদচারণা ছিলো তার কোনো স্থানই যেনো বাদ দিতে চান না গ্রাজুয়েটরা। কয়েক বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরে যেনো পরম মমতায় আলিঙ্গন করছেন ক্যাম্পসকে। অনেকেই আবার এক সময় যে রুমটাতে কয়েক বছর ছিলেন সেখানে গিয়ে একটু দেখা করে আসতেছেন। এ যেনো বহু বছর পর আপন নীড়ে ফেরা। যে ক্যাম্পাস আজ তাদের গ্রাজুয়েট করে তুলেছে, দিয়েছে নতুন জীবন সেই ক্যাম্পাসে সবাই ফিরতে পেরে যেনো আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন।
সমাবর্তনে অংশ নিতে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাকমিনা জেসমিন সোমা বলেন, সমাবর্তনে অংশগ্রহনের স্বপ্ন সব গ্রাজুয়েটদেরই থাকে। সে স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাচ্ছে। খুবই ভালো লাগতেছে। এতো ভালো লাগতেছে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। সব পুরনো বন্ধুদের আবার ফিরে পেয়েছি। গল্প করছি, ছবি তুলছি। সব মিলে একটি স্বপ্নের অধ্যায় পার করছি।
সমাবর্তনে অংশ নিতে আসা পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, সমাবর্তনে অংশ নেয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বিজ্ঞান ভবন, প্যারিস রোড, লাইব্রেরি, টুকিটাকি চত্বর সব জায়গায় আবার হাটছি। যেনো আমি আমার সেই সময়ে ফিরে যাচ্ছি। সেই সাথে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে সমাবর্তনে অংশ নেবো, পুরোটাই যেনো স্বপ্নের মতো লাগতেছে।
এবারের সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ৬ হাজার ১৪ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। এতে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারীদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে কলা অনুষদের ১১টি বিভাগের ১ হাজার ১৪০, আইন অনুষদের আইন বিভাগের ২২৫, বিজ্ঞান অনুষদের ৮টি বিষয়ে ৯১৬, বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ৪টি বিভাগে ৯৫৩, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি বিভাগে ১ হাজার ৩৬, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ৬টি বিভাগে ৫৬১, কৃষি অনুষদের ৪টি বিভাগের ৭২, একই অনুষদের ডিভিএম ডিগ্রির জন্য ৪৫, প্রকৌশল অনুষদের ৫টি বিভাগে ৩০১, চারুকলা অনুষদের ৬৭, এবং ইনস্টিটিউটসমূহ থেকে ১৯জন গ্রাজুয়েট স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইসডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন করেন। এছাড়াও এমবিবিএস ৫৩৪ ও বিডিএস ১৪৫ জন নিবন্ধন করেছেন।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ইমিরেটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজুদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এদিন রাষ্ট্রপতির বিদায়ের পর বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে গান পরিবেশন করবেন দেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
পাঠকের মন্তব্য