রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ওই শিক্ষার্থী হলের ছাদ থেকে নামতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছে বলে দাবি করেন রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সোমবার দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তারা। ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান গণমাধ্যমে যা অভিযোগ করেছেন তা ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, ‘গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে মাদকবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষিতে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন। আবদুর রহমান নামের ওই শিক্ষার্থীকে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর করেনি। মাদকসেবন করে ছাদ থেকে পালানোর সময় সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল।’
মারধরের অভিযোগকারী আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি রাজশাহীর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকরি করেন। ঘটনার পর তাকে চোখের কোণে গুরুতর জখম অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চোখের কোণে চারটি সেলাই লেগেছে।
এদিকে গত রোববার ভুক্তভোগী আব্দুুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, ‘যতোবারই আমি মাদক সেবন করিনি বলেছি ততোবারই আমার ওপর চড়াও হয় রাবি ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব, সহ-সম্পাদক আব্দুল্লা হীল কাফি ও কর্মী শুভ্র দেব। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আমার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। গাঁজা সেবনের বিষয়টি স্বীকার না করলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। ভয়ে আমি বিষয়টি স্বীকার করি। তারা সেটি ভিডিও করে। পরে তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে চলে যায়।’
সংবাদ সম্মেলনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ওই রাতে আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগকে জানায়, হলের ছাদে বহিরাগত কয়েকজন ছাত্রদের নিয়ে মাদকসেবন করছে। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বক্ল ‘ক’ এর ছাদে যায়। বক্ল ‘ক’ এর ছাদে গিয়ে দেখতে পায় যে, ‘খ’ বক্লের ছাদে কয়েকজন মাদক সেবন করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদেরকে নিচে নামতে বললে মাদক সেবনকারীরা ভয়ে পালাতে শুরু করে এবং বহিরাগত একজন তার সাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন মাদকাসক্ত আব্দুর রহমান সিঁড়ি দিয়ে পালাতে গিয়ে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমতাবস্থায় মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে অতিথি কক্ষে নিয়ে আসে। তার কাছে জানতে পারে, সে বহিরাগত কয়েকজনকে নিয়ে হলের ছাদে মাদকসেবন করছিল। সেই সময় বিষয়টি হল প্রশাসন ও হলের গেট পুলিশকে অবহিত করা হয়। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বলা হয় তাকে আপাতত পুলিশে না দিয়ে চিকিৎসা করাতে। সেই সময় হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় ও হল প্রাধ্যক্ষ সেখানে আসেন এবং ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মাদকাসক্ত আব্দুর রহমানকে হল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে প্রাধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ছাদ থেকে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্র্মী কোনভাবে তাকে মারধর করেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রলীগের কেউ যদি মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকে, আর তার প্রমাণ যদি কেউ আমাদেরকে দেয় তবে সেসব মাদকসেবীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, মিজানুর রহমান সিনহা, মাহফুজ আল-আমিন ছাড়াও ঘটনায় অভিযুক্ত আসাদুল্লাহিল গালিব, আব্দুল্লাহ হীল কাফি ও শুভ্র দেব উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মন্তব্য