বাবা ছিলেন বাউল শিল্পি। সেখান থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ তার। তবে হিজড়া হবার দরুন সমাজে সেভাবে স্থান হয়ে ওঠেনি জান্নাত জাহানের। কিন্ত হিজড়া হিসেবে না বেঁচে সমাজের আর দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে চাই জান্নাত। সেখান থেকেই তার উঠে আসার গল্প। আর সে গল্পের অংশ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো হিজড়া সম্প্রদায়ের শিল্পী জান্নাতের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা “জান্নাত গাইছে”।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গ্রীণ রোডের বিন্দুধারীতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি ও আধুনিক গানসহ বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর মধ্যে মায়াবন বিহারিনী হরিণী, ভেঙে মোর ঘরের চাবি, তুই যদি হইতি গলার মালা, আমি রাই বিনোদনী, আমরা মলয় বাতাসে ভেসে ভেসে যাবো, শাওন রাতে যদি, সহ বিভিন্ন গান অন্যতম। আয়োজনে শিল্পীর গানের মাঝে মাঝে নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন জন।
রাজধানীতে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সদাচারণ প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং রিথিংক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন হিজড়া যে কাজে পারদর্শী বা আগ্রহী, তাকে সে কাজ শেখানোর মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সঙ্গীতে আগ্রহী জান্নাত’কে ছয় মাস ধরে সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দিয়েছে রিথিংক। প্রশিক্ষণ শেষে শিল্পী জান্নাতের মঞ্চে শুভাগমন উপলক্ষ্যে রিথিংক আয়োজন করে তার একক সঙ্গীত সন্ধ্যা ‘জান্নাত গাইছে’।
আয়োজনের শুরুতেই দর্শক ও অতিথিদের উদ্দ্যেশে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন জান্নাত। এসময় তিনি বলেন, হিজড়া হলেও আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চাই না। গান দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই। একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। রিথিংক সেই প্লাটফর্মটা আমাকে তৈরী করে দিয়েছে, এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই অন্য সকল হিজড়ারাও দ্বারে দ্বারে ঘোরা বাদ দিয়ে সমাজে কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হোক।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রি-থিংকের পরিচালক লুলু-আল-মারজান। তিনি বলেন, আমরা চাই হিজড়াদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটাতে। সে লক্ষ্যেই আজকের এ আয়োজন। আমরা চাই আপনারাও তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেন। এর ফলে তাদের সাথে আমাদের দূরত্বটা যেন ঘুচে যায়।
হিজড়াদের উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে রিথিংক, যা আগামীতে হিজড়াদের উন্নয়নে আরো বেশি ভূমিকা পালন করবে বলে জানান আয়োজক সংস্থা। আয়োজন শেষে আয়োজনে টিকেট বিক্রি করে দর্শকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সর্বোমোট ১০ হাজার শিল্পী জান্নাতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আসমা আহমেদ সেজুতি।
পাঠকের মন্তব্য