ইন্টারকন্টিনেন্টালের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দীর্ঘ প্রায় চার বছরের সংস্কার জন্য হোটেলটি বন্ধ ছিল। সরকারি মালিকানা এ হোটেলটির ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ (আইএইচজি)। সরকারের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)।বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীর শাহবাগে এ হোটেলের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক পাঁচতারকা হোটেল হিসেবে ১৯৬৬ সালে তার যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্টারউড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হোটেল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে এটি চালিয়েছে। পরে ২০১৩ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপের (আইএইচজি) সঙ্গে বিএসএলর চুক্তি সম্পাদিত হয়। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার কাজ শুরু হয়।ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ (আইএইচজি) বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে তাদের হোটেল ব্যাবসা পরিচালনা করছে। এ গ্রুপের টপ ব্র্যান্ড হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। বর্তমানে ৬০টি দেশে এই ব্র্যান্ডের ১৮০টি হোটেল পরিচালিত হচ্ছে। আইএইচজি’র অন্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রাউন প্লাজা, হলিডে ইন, হলিডে ইন এক্সপ্রেস, ক্যান্ডেলউড সুইট, হোটেল ইনডিগো, কিমপটন হোটেল প্রভৃতি। সব মিলিয়ে এই গ্রুপের ছয় হাজার হোটেল রয়েছে সারা বিশ্বে।

জানা গেছে, পুরোনো ভবনের বাইরের কাঠামোটা ঠিক রেখে ভেতরের সবকিছু ঢেলে সাজানো হয়েছে। আগের নকশা অনুযায়ী রুমগুলো ছিল ২৬ বর্গ মিটারের। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বের পাঁচতারকা হোটেলগুলোর রুম হচ্ছে ৩৫-৪৫ বর্গমিটার পরিসরের। আগের রুমগুলো সেই তুলনায় বেশ ছোট হয়ে গিয়েছিল।ওগুলো ভেঙে ৪০-৪২ বর্গমিটারের করা হয়েছে। আগের হোটেল ভবনে কক্ষ ছিল ২৭২টি। পরিসর বাড়ানোর কারণে কক্ষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৬টি।

বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলটির হলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেয়া হয়েছে।পাল্টানো হয়েছে হোটেলের প্রবেশ পথের স্থাপত্য।বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে অভ্যর্থনা কক্ষের কারুকাজ করা হয়েছে। হোটেলটির পুরোনো আসবাবপত্র পাল্টানো হয়েছে। দেশীয় ঐতিহ্যের ভিত্তিতে ডিজাইন করা নতুন আসবাবপত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পাঁচতারা হোটেলের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ইন্টারকন্টিনেন্টালের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রুমগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিলাক্স, ডিলাক্স টুইন, সুপার ডিলাক্স, লাক্সারী ডিলাক্স, এক্সিকিউটিভ স্যুইট, কিং স্যুইট, প্রিমিয়ার স্যুইট, বাঙ্গালি স্যুইট প্রভৃতি। এসব রুম এবং স্যুইটগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে যুক্ত করা হয়েছে সিটি ভিউ সুবিধা।

হোটেলের অভ্যন্তরীণ সুবিধার মধ্যে রয়েছে মিনি বার, বার, লন্ড্রি, রেষ্টুরেন্ট, হল রুম, বল রুম, কনফারেন্স রুম, কেন্দ্রীয় শীতাতপ, ইনডোর গেমস, সুইমিং পুল, পার্লার, সেলুন, ব্যায়ামাগার এবং স্টিম বাথ, রুম সার্ভিস, স্যুভেনির শপ, শপিং কর্ণার, এটিএম বুথ, ফরেইন মানি এক্সচেঞ্জ, গিফট শপ, কার রেন্টাল, ফ্যাক্স, কপিয়ার, স্কুয়াশ কোর্ট, টেনিস কোর্ট, চব্বিশ ঘণ্টা রিসেপশন, হুইয়ারপুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, বাণিজ্যিক অফিস, এয়ারপোর্ট ট্রিপ, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা।

বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপের (আইএইচজি) যে চুক্তি হয়েছে তার মেয়াদ ৩০ বছররের। সেই অনুযায়ী আগামী তিনদশক এটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামেই পরিচালিত হবে।

৩৫ বছর পর ফের পুরনো নামে ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ শুরু করেছে নবযাত্রা। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন সাজে নতুন আয়োজনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সাড়া ফেলতে পারবে আগের চাইতে বেশি।

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪৪
অনলাইন ডেস্ক

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন