যৌতুকের দাবিসহ নানা বিষয়ে ঝগড়া চলছিল এক মাসের বেশি সময় ধরে। এর জের ধরে স্বামী ফারুক হোসেন রাগের মাথায় স্ত্রী শম্পার গলা টিপে ধরেছিলেন। কিন্তু এই রাগ যে কাল হবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি বলে দাবি ফারুকের।
শম্পা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মারা গেছেন। ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে পরিবার শম্পার লাশ নিয়ে জামালপুরের পথে রওনা দিয়েছে।
মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল শম্পার। গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মুখে মোটা নল ঢোকানো শম্পাকে দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।
শম্পার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। সাড়ে তিন লাখ টাকা যৌতুকে পারিবারিকভাবেই তাঁর বিয়ে হয় ৮ নম্বর বাঁশচড়া ইউনিয়নের ফারুক হোসেনের সঙ্গে। শম্পার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, যৌতুকের টাকার জন্যই শম্পার স্বামী তাঁকে মেরে ফেললেন। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই শম্পা লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহবুবুল আলম জানিয়েছিলেন, শম্পার গলায় ফাঁস দেওয়া হয়েছিল। অজ্ঞান থাকা অবস্থায় তাঁর খিঁচুনি হয়। মুখের লালা ফুসফুসে চলে গিয়ে নিউমোনিয়া হয়।
শম্পার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এসএসসি পাস শম্পার বিয়ের আগে বড় কোনো অসুখ ছিল না।
ঘটনার পর থেকে শম্পার স্বামী ফারুক হোসেনসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য শম্পার সঙ্গেই আছেন। আইসিইউর বাইরে গতকাল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রাগের মাথায় বউয়ের গলা টিইপ্যা ধরছিলাম। ওই অবস্থায় এক মিনিটের মতো ধইরা রাখছিলাম। তারপর ঘর থাইক্যা বাইর হইয়া যাই। পরে ফিরা দেহি বিছানায় পইড়া রইছে। নান্দিনা হাসপাতাল থেইক্যা ঢাকায় আনছিলাম।’
ফারুক বলেন, ‘বিয়ের পর চার মাস স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ভালোই ছিলেন। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ধরে স্ত্রীর মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে, সংসারে মনোযোগ ছিল না। বাবার বাড়ি গেলে আর আসতে চাইত না।’
ফারুক আরও বলেন, ‘মনে মনে চিন্তা করছিলাম, বউয়ের অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হইছে। তবে নিজের চোখে দেখি নাই। বউরে কোরআন শরিফ হাতে নিয়াও সত্য কথা বলতে বলছিলাম। ওই সময় আমি ঘুমাইতে পারতাম না। স্মৃতিশক্তিও কইম্যা যায়। বউরে আগেও একটা–দুইটা চড়–থাপ্পড় মারছি।’
ফারুক নিজেই জানালেন, তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে বেকার। বিদেশে যাওয়ার জন্য বিয়ের সময় সাড়ে তিন লাখ টাকা যৌতুক নিয়েছিলেন। শম্পার পরিবার দেড় লাখ টাকা দিয়েছে, বাকি টাকাও দিতে চেয়েছিল।
শম্পার ভাবি মিনা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই শম্পা তাঁর স্বামীর সন্দেহ বাতিকের কথা বলেছিলেন। আর এর সঙ্গে যৌতুকের দাবি তো ছিলই।
চার বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে শম্পা ছিলেন সবার ছোট। বাবা কৃষি কাজ করেন। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।
আজ শম্পার মামা হামিদ মিয়া বলেন, শম্পার স্বামীর বিরুদ্ধে জামালপুরে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। শম্পার স্বামীও বলেন, তিনি থানায় গিয়ে নিজেই পুরো ঘটনা খুলে বলবেন। বর্তমানে তিনি মৃত স্ত্রীর সঙ্গেই আছেন।
পাঠকের মন্তব্য