যুগের পর যুগ পার হচ্ছে। তবুও ভাগ্যে সেতু মিলেনি। নড়বড়ে সাঁকো, ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত তিন’শ পরিবারের। কৃষক ফসল ফলিয়ে ঘরে তুলতে গিয়ে সাঁকো থেকে পড়ে আহত হন। কোমলমতি শিশুরাও আলোকিত হতে গিয়ে ঠিক একই পরিস্থিতির মুখে পড়ে। বাত্তিরখালের পাশ ভেঙেছে, বেড়েছে সাঁকোরও দৈর্ঘ্য। প্রায় দেড়’শ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো। কোন মতে স্থানিয়রা নিজেদের প্রচেষ্টায় অমজবুত বাঁশ ও বিভিন্ন গাছের সমন্বয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন বহু আগে। মানুষের ভারে সাঁকো এখন মাত্রাধিক ঝুঁকিতে, একেবারে নাজুক অবস্থা। বিকল্প যাতায়াত হিসেবে ঘুরে আসতে হয় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার পথ। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর মার্টিন ৮নং ওয়ার্ড হাজি শাহে আলম মেম্বার দরজা থেকে একটু দক্ষিণে সাঁকো দিয়ে দুর্ভোগে চলাচলকারী মানুষগুলোর অভিযোগটা এমনিই। সাঁকোটির একটু উত্তরেই উত্তর পশ্চিম চর মার্টিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানিয় নয়নাভিরাম দৃশ্যের মসজিদ ও বাজার। স্থানিয় বাসিন্দারা জানায়, স্কুল শিক্ষার্থী, লোকজনের যাতায়াত
সুবিধার্থে বহু আগেই সাঁকোটি
নির্মিত হয়েছিল। বর্ষাকালে চরম
সঙ্কটের মুখে পড়তে হয় সবাইকে।
জোয়ারের পানিতে সাঁকো ডুবে
থাকে। আতঙ্কের মাঝেই যাতায়াত
সবার। কয়েকবার সাঁকোটি বিধ্বস্ত
হয়েছে। মেরামতের জন্য বরাদ্দ
এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায়
একেবারে স্বল্প। মানুষ এ স্বল্প
বরাদ্দ আর চান না, একটি সেতু চান।
যে সেতু আলো ছড়াবে এ অঞ্চলের
উন্নয়নে।
প্রবাস থেকে ফিরে সেতু না হওয়ার
ক্ষোভের কথা জানালেন স্থানিয়
তরুণ সালাহ উদ্দিন সুমন। তিনি
বলছিলেন, “মানুষের ভোগান্তি যেমন
দেখে গিয়েছি, এখনও তাই। একটা
সেতুর জন্য আর কতকাল অপেক্ষা
করতে হবে? ঠিক বুঝতে পারছি না।
এখানে একটি সেতুর প্রয়োজন,
সবাই জানে। সেতুর জন্য কয়েক
উপরে দরখাস্ত পর্যন্ত দেওয়া
হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কী কোন
বরাদ্দ আসে না? যদি আসে, তাহলে
সেগুলো যায় কোথায়?”
নিজেদের যাতায়াত সমস্যার নিয়ে
উদ্বিগ্নের কথা জানালেন
স্থানিয়রা।
আবুল বাশার। বয়স প্রায় ৬০এর
কাছাকাছি। সাঁকো উত্তর পাড়ে(মধ্য
চর মার্টিন) বাড়ি। তিনি বলেন,
“আমরা গাঁই-গিরস্তি(কৃষিকাজ) করে
বাঁচি। ক্ষেতের ফসল আনতে গেলে
চিন্তায় থাকি। ধান, সয়াবিন, মরিচ,
বাদামসহ সব ফসল আমরা খালের
পানিতে ডুবে ভিজে ভিজে আনতে হয়।
ব্রীজ থাকলে এ সমস্যা হতো না।”
“আমরা স্কুলে যেতে পারিনা ঠিক
মতো। সাঁকোতে উঠলে সাঁকো শুধু
কাঁপে। এসময় খুব ভয় লাগে। ওই দিন
একজন নিচের পানিতে পড়ে বইসহ
কাপড়-চোপড় ভিজে গেছে।
এক্সিডান্টও(আহত) হয়েছে। পরে
আর স্কুলে যেতে পারেনি। আমিও এ
সাঁকো দিয়ে আগের মতো স্কুলে
যাই না, অনেক দূর দিয়ে ঘুরে যাই। এ
কারণে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
ঠিকমতো ক্লাশ করতে পারিনা।” এ
অভিযোগ জানালেন প্রথম শিশু
শিক্ষার্থী ইসতিয়াক মল্লিক।
স্কুলের এসব শিশুদের নির্বিঘ্ন
পারাপারে সেতুর দাবি জানিয়েছেন
সাঁকো সংলগ্ন ওদের অভিভাবক
মোহসেন হরাজী(৬০)মো. লোকমান
হোসেন(৩২) খোকন মিস্ত্রী(৩০),
মো. সিরাজসহ(৪৬) অনেকেই।
মানুষের এসব দাবির যৌক্তিকতা
দেখিয়ে সেতু নির্মাণের দাবি জানান
স্থানিয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম
পারভেজ। তিনি বলেন, “অনেক আগ
থেকেই এখানে একটি ব্রীজের জন্য
চেষ্টা চলছে। আশাকরি কর্তৃপক্ষ
আমাদের দাবির বাস্তবায়ন করে
মানুষের কষ্ট দূর করবে।”
পাঠকের মন্তব্য