রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আকতার জাহানের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসে তাঁর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মৌন পদযাত্রা ও স্মরণসভা করেছে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বেলা ১১ টায় রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে একটি মৌন পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে বিভাগের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় বিভাগের অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘মৃত্যুর দুইদিন আগেই তার সাথে আমার কথা হয়। সে আমাকে একটি আশঙ্কার কথা বলেছিল। কেউ যেন তার পিছু নিয়ে অনুসরণ করছে। আমি তার মধ্যে কখনই আত্মহত্যা করার লক্ষণ দেখিনি। কিন্তু এর দুই দিন পরে তার মৃত্যু সংবাদ পাই।’
অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আকতার জাহানের স্মৃতি অমলিন। আমরা এ দায় এড়াতে পারিনা। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা একটা হত্যা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয় নি। কোনো কালো হাত যাতে সত্যকে রুখে দিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পা-ে বলেন, ‘আকতার জাহানের মৃত্যু আমাদের এখনও ব্যথিত করে। আমরা তার মৃত্যু রহস্যটা জানতে চাই। এটা কি অস্বাভাবিক মৃত্যু ছিল নাকি আত্মহত্যা ছিল? আর যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আকতার জাহানের মৃত্যু আমাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে থাকবে। মৃত্যুটা অস্বাভাবিক ছিল। স্বেচ্ছায় মৃত্যু এমন হতে পারেনা। যতদিন না আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সত্য উদঘাটনে সক্ষম হচ্ছে ততদিন এই মৃত্যুটি আত্মহত্যা না সুপরিকল্পিত হত্যা, প্রশ্ন থেকে যায়।’
বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অধরা মাধুরী পরমার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আরও স্মৃতিচারণ করেন সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান, শাতিল সিরাজ, মোজাম্মেল হোসেন বকুল। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক কাজী মামুন হায়দার, ড. মাহাবুবুর রহমান, ড. এবিএম সাইফুল ইসলাম, মামুন আ. কাইয়ুম ও আব্দুল্লাহীল বাকীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।
বিচারের অগ্রগতির বিষয়ে রিভিশনকারী পক্ষের আইনজীবী হাসান রিজভী বলেন, মামলাটি রাজশাহী সিএমএম আদালতে বিচারাধীন। মামলার অভিযোগপত্রে ‘মনগড়া’ তথ্য দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আবেদন করতে দেরি হওয়ায় আদালত সেই আবেদন গ্রহণ না করে বলেছিলেন, যেহেতু সাক্ষী চলে এসেছে সেটা এই মুহূর্তে হচ্ছে না। পরবর্তীতে আদালতের মনে হলে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তাই আমরা অধিকতর তদন্তের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছি। সেটারই শুনানি ছিল গত ৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী ২৭ তারিখে এ বিষয়ে শুনানি আছে।
২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবন জুবেরির ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে আকতার জাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আকতার জাহানের ছোটভাই কামরুল হাসান রতন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন।
পাঠকের মন্তব্য