“অসময়ের সামান্য বৃষ্টিতে সয়াবিনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটু পানি নিষ্কাশন করারও তেমন ব্যবস্থাপনা নেই। তৈলাক্তের কারণে পানি লাগলেই সয়াবিন পঁচে যায়। সয়াবিন ও সয়াবিন গাছ পানিতে ডুবে নষ্ট হলে প্রচন্ড দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়ায়। এতে ব্যাপকহারে মশা জন্ম নেয়। যার কারণে মানুষের দেহে ডায়েরিয়া,
টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানি বাহিত
রোগের আক্রমণ ঘটে। আর পরিবেশ
মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
এ পঁচা পানিতে যখন কৃষক কাজ করে
তখন পা ও হাতে এলার্জির মতো
কঠিন রোগ কৃষকদের শরীরে প্রবেশ
করে। ফলে মারাত্মক এ রোগে
ধুঁকতে হয় কৃষকদের। এমন কী
অকালেই অনেককে প্রাণ হারাতে
হয়।”
গ্রামের কৃষকদের সংকটের এমন
অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন একজন
গ্রাম চিকিৎসক খুরশিদ আলম
চৌধুরী। যিনি এ চিকিৎসা সেবা
দিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের
চর মার্টিনের বলিরপোল বাজারে।
দেশের মোট উৎপাদনের ৮৫ভাগ
সয়াবিন সরবরাহ কর হয় এ
লক্ষ্মীপুর থেকে। সেখানের
কৃষকদের জীবনের এমন দুরাবস্থার
গল্প তুলে ধরে তিনি আরো
বলছিলেন, “অন্যান্য ফসল উৎপাদন
করতে যে খরচ, তার চেয়ে দ্বিগুন
খরচ সয়াবিন চাষে। সয়াবিনে কীট-
পতঙ্গের আক্রমণও বেশি। সে
অনুযায়ী সয়াবিনের ন্যায্য মূল্য
কৃষকরা পান না। একদিকে যেমন
সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়, অন্যদিকে
কৃষকের লোকসান গুণতে হয়। যার
কারণে কৃষক অধ্যুষিত এসব গ্রামে
ব্যবসায় ধস নামে, ব্যবসায়ীরাও
মানবেতর জীবন-যাপন করেন। এর
সমাধান হচ্ছে সয়াবিন চাষ থেকে
কৃষকদের সরে আসতে হবে। প্রকৃতি
ও পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে
ফসল উৎপাদন করলে কৃষকদের
স্বপ্নভঙ্গ হবে না। এ কৃষকরা অন্য
দশজনের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচতে
পারবে।”
একজন কীটনাশক ব্যবসায়ী ও
স্থানিয় চর মার্টিনের ইউপি সদস্য
নুরুল ইসলাম পারভেজ। ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনিও
বলছিলেন, “ব্যবসায়ও পুরো ধস
নেমেছে। না আছে বেচা-কেনা।
লোকসান লোকসানে ব্যবসা আগের
মত নেই। এখানের কৃষকরা একেবারে
দরিদ্র। যার কারণে তারা বাকি নিয়ে
সয়াবিন চাষ করে। কিন্তু কৃষকদের
খরচের টাকা না উঠলে তারা
আমাদেরও দেনা শোধ করতে পারে
না। ঋণের ভারে কৃষকদের জীবন
এখন ভালো যাচ্ছে না।”
এমন সময়ে কৃষকদের প্রতিক্রিয়া
কি? কেন-ই-বা তারা এ সয়াবিন চাষে
ঝুঁকেছেন? জানতে কথা হচ্ছিলো
একজন কৃষক আবদুর রহমানের
সাথে। তার বয়স ঠিক ৫৫ছুঁই ছুঁই।
তিনি বলছিলেন, “সওয়ামিনের
(সয়াবিন) গিরস্তি করে এখন ধার-
দেনা করে সংসার চালাই। ঋণের
বোঝা মাথাত লই ঘেঁড়িটাও সোজা
করতে হারি না। এর কারণে দিন দিন
দুশ্চিন্তা বাড়তেছে। আমরা কোথায়
যামু? এ সওয়ামিনের গিরস্তি করলে
এক্কানা লাভ আছে। কিন্তুকাল বৃষ্টি
আঁঙ্গোরে শেষ করে দেয়। এক্কানা
ঝড়ির হানি লাইগলেই সওয়াবিন ফুলে
নষ্ট হয়ে যায়। বেচতে গেলে দাম
হাইনা। হোলাইন-সাবাইন নিয়া
এক্কানা যে সুক্ষে দিন কাড়ামু
হেইড়াও কপালে জোটেনা। আর
সওয়ামিন করুম না। সামনের দিকে
অন্য গিরস্তি করমু।”
দেশের সিংহভাগ সয়াবিনের উৎপাদনে শীর্ষে থাকা এ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলছিলেন, “আমরা কৃষকদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে সয়াবিন চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। সনাতন কালের মতো সয়াবিন চাষ করলে অতিবৃষ্টির কবলে পড়ে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কৃষকরা এ ছাড়া শাক-সবজিও উৎপাদন করে বেশ লাভবান হতে পারেন। এঅঞ্চলে শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। টমেটো, তরমুজ, লাউ-কুমড়া, করলার মতো জনপ্রিয় সবজি চাষ করে কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ সাফল্যও পেয়েছেন। এগুলো বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যেহেতু মানুষের জীবনে এ উপাদানগুলোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।”
পাঠকের মন্তব্য