পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এটি। বাঙালি সমাজে পবিত্র ঈদুল আজহা ‘কোরবানির ঈদ’ নামে বেশি পরিচিত।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুপম ত্যাগের স্মরণে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ পবিত্র ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করে আসছেন। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, কোরবানির পূর্বশর্ত ও অন্যতম উদ্দেশ হচ্ছে আল্লাহভীতি ও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো একদিন গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যায়।
কোরবানির কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে সুরা কাওসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।
সূরা হজে বলা হয়েছে, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়। প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে। (মুসনাদে আহমদ)
সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ধনী গরিব সব ভেদাভেদ ভুলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন সকলেই। ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের প্রধান ঈদ জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে ইতিমধ্যে নিজ নিজ বাসা বাড়িতে অবস্থান করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
পবিত্র ঈদুল আযহা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) এর সঙ্গে সম্পর্কিত। মহান আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদেশ করেন তাঁর প্রিয়পুত্র হযরত ইসমাইলকে রবের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে হবে। কোনপ্রকার বিচলিত না হয়ে মহান আল্লাহর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)। তিনি প্রিয়পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। যা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি যখন পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার জন্য প্রস্তুত। ঠিক সে মুহূর্তে তৎক্ষণাৎ আল্লাহর হুকুমে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। মহান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.)।
আল কোরানে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার চমৎকার বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক বলেন, অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্ন দেখেছি আল্লাহর আদেশে আমি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি? সে বললো, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
যখন পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম (আ.) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অহী নাজিল হলো- হে ইব্রাহীম তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মকারিদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু।
দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিকবৃন্দ। সাবেক বিরোধী নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বালাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
পাঠকের মন্তব্য