ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর : পরিত্যক্ত রানওয়েতে শুকানো হয় কৃষি পণ্য

সম্ভাবনা থাকার পরও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনেও চালু করা হয়নি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। ৩৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে বিমানবন্দরটি। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে স্টল ভবনের দরজা-জানালা এবং রানওয়ের কার্পেটিং। চুরি হয়ে গেছে সীমানা পিলারসহ তারের বেড়া। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হওয়া বিমানবন্দরের রানওয়ে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে খেলার মাঠ এবং ধান, গম ও ভুট্টা শুকানোর কাজে। অথচ এটি চালু করা হলে একদিকে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হতো অন্যদিকে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন মাত্রা।

জানা গেছে, ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জে ৫৫০ একর জমির ওপর এ বিমানবন্দরটি স্থাপিত হয়। এ বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। রানওয়ের পশ্চিম প্রান্তে ১০টি সাব-রানওয়ে ছিল। এতে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমানবন্দরের সব জমি ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভাগ ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ওই জমিতে বিমানবন্দরের স্টল ভবন, রানওয়ে রয়েছে। বিমানবন্দরটি নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন চালু ছিল। পাকিস্তান আমলেও ত্রাণ সামগ্রী পরিবহনসহ জরুরি কাজে এ বিমানবন্দর ব্যবহৃত হতো। স্বাধীনতার পরও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। তখন ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান চলাচল করত। কিন্তু ১৯৮০ সালে লোকসানের অজুহাতে এ বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে স্থানীদের দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে এ বিমানবন্দর ফের চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে জন্য ১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামত, টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হয়। এয়ার বেঙ্গল ও বোরাকসহ ছয়টি বেসরকারি সংস্থা ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে স্টল বিমান সার্ভিস চালুর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিও করে। কিন্তু সে চুক্তি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর কিছুদিনের মাথায় স্টল বিমান সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিমানবন্দরটি ফের চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যথারীতি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বিমান এখানে ল্যান্ডও করানো হয়। কিন্তু সে উদ্যোগও ভেস্তে যায়। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী এ বিমানবন্দরের ১০৫ একর জমি তাদের আওতায় নিয়ে ৩০ একর জমি স্থানীয়দের লিজ দেয়। সিভিল অ্যাভিয়েশন তাদের ১১০ একর জমির মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করেছে। পরিত্যক্ত থাকে এর রানওয়ে ও স্টল ভবন। সরকারি নজরদারি না থাকায় চুরি হয়ে যায় এর সীমানা পিলার ও তারের বেড়া।

’৯৪ সালে মেরামতের পর চালু না হওয়ায় আবারও নষ্ট হয়ে যায় রানওয়ের কার্পেটিং ও স্টল ভবনের দরজা-জানালা। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয় বিমানবন্দরটি। ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায় রানওয়ে। এ রানওয়েতে কয়েক বছর ধরে চলছে ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ। এছাড়াও রানওয়েতে সারা বছর ধান, গম ও ভুট্টাসহ গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রী শুকায় স্থানীয়রা।

এদিকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিমানবন্দর পরিদর্শন করে ১ বছরের মধ্যে চালু করার আশ্বাস দেন। কিন্তু ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে এসে মন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বিমানবন্দরটি চালু করতে যে অর্থের দরকার তা মন্ত্রণালয়ের নেই। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে হতাশ হন দুই জেলার মানুষ। তারা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানান। বিমানবন্দর চালুর দাবিতে মন্ত্রীকে ঘেরাও করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এরপর চলতি বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন। কিন্তু তিনিও এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভা এয়ারলাইন্সের মালিক জিয়াউল ইসলাম বকুল জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট অনেক বিক্রি হয়। যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে আমরা সে সেবা দিতে পারছি না। টিকিট না পেয়ে মানুষ ফিরে যায়। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনক খাতে পরিণত হবে ও মানুষ কম সময়ে দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে পারবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এটির সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০৯:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন