‘জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূল বাঁচাই, সবুজ সুরক্ষা করি’- এ স্লোগানে উপকূলের বিপন্ন জনপদ চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনাতীরের অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সবুজ কর্মসূচি ২০১৮ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে শনিবার (১১ আগস্ট) চরভৈরবীর এমজেএস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চাঁদপুরের হাইমচরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে এমজেএস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এতে সহযোগিতা করেছে কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্ক-আলোকযাত্রা, মিডিয়া পার্টনার ছিল অনলাইন নিউজপোর্টাল একুশ শতক ও ইউনাইটেডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হাইমচর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. মনোয়ার হোসেন মোল্লা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মোহাম্মদ মাহবুবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাইমচর মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. রবিউল্লাহ, আয়োজক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার, চাঁদপুরের পুলিশ সদস্য ইছমাইল হোসেন রুবেল।
সকালে বিদ্যালয় চত্বর থেকে র্যালী বের হয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি স্থান প্রদক্ষিণ শেষে পূনরায় বিদ্যালয় চত্বরে এসে শেষ হয়। র্যালী শেষে প্রধান অতিথি শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত উপকূল পড়ুয়াদের জনপ্রিয় দেয়ালপত্রিকা ‘বেলাভ‚মি’র শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে উদ্বোধন করেন পড়ুয়াদের আঁকা ছবি নিয়ে সজ্জিত দুটো চিত্র গ্যালারীর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপকূল জুড়ে চলমান এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট ও উপকূল সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন কর্মসূচির স্থানীয় সমন্বয়ক কলেজ শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, ‘কোস্টাল ইয়ূথ নেটওর্য়াক-আলোকযাত্রা’র লক্ষ্মীপুর টিম লিডার জুনাইদ আল হাবিব। বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিদা মালিহা হৃদিকা ও নুসরাত জাহান নাবিলার উপস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন দশম শ্রেণীর জান্নাতুল ফেরদাউস লিমা ও মেহজাবিন ঊষা।
কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া ক্ষতবিক্ষত মেঘনাপাড়ের নদীভাঙা মানুষের জীবন-চিত্র অনুসন্ধানে গিয়েছিল। সবার তথ্য সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে একটি প্রতিবেদন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ সবার সামনে সেই প্রতিবেদন তুলে ধরেন ৯ম শ্রেণীর আফরিদা মালিহা হৃদিকা।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ। অতিথিগণের হাত থেকে বিজয়ী পড়–য়ারা পুরস্কার নেওয়ার সময় করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। রচনা লিখে প্রথম স্থান অর্জন করেন দশম শ্রেণীর সুমি আক্তার, দ্বিতীয় হয়েছেন সুমাইয়া আক্তার, তৃতীয় ময়না আক্তার। সংবাদ লিখে প্রথম হয়েছেন ৯ম শ্রেণীর আফরিদা মালিহা হৃদিকা, দ্বিতীয় হয়েছেন ৮ম শ্রেণীর মেহবুবা মেহনুর, তৃতীয় হয়েছেন ৯ম শ্রেণীর নুসরাত জাহান নাবিলা। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন ৮ম শ্রেণীর মেহবুবা মেহনুর, দ্বিতীয় হয়েছেন ৭ম শ্রেণীর মরিয়ম আক্তার ও তৃতীয় হয়েছেন একই শ্রেণীর আমেনা বেগম।
বিগত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবার উপকূলের ৩০ স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘সবুজ উপকূল ২০১৮’ কর্মসূচি। উপকূলীয় ১৩ জেলার ২৩ উপজেলার ১৫০ স্কুলের দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এই নিয়ে চার বছরে এ কর্মসূচির আওতায় এসেছে উপকূলের ১৬ জেলার ২৬ উপজেলার ৪০৫টি স্কুলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। উপকূলের প্রান্তিক জনপদের শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ ও জলবায়ু সচেতনতা, লেখালেখির চর্চা এবং সৃজনজশীল মেধার বিকাশ এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।
উপকূলের ১৬টি জেলার ২৬টি উপজেলা এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। কর্মসূচির আওতায় উপকূল জুড়ে অসংখ্য ভলান্টিয়ার তৈরি হয়েছে। উপকূলের প্রান্তিক জনপদের শিক্ষার্থীদের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ তাদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ, তথ্য ও জ্ঞান আহরণ এবং লেখালেখির চর্চার মাধ্যমে সামাজিক কাজে উদ্ধুকরণ এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- সৃজনশীল প্রতিযোগিতা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরি, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, গাছের চারা রোপণ, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ।
সবুজ উপকূল কর্মসূচি শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। প্রথম বছরে ১৫টি স্থানে, দ্বিতীয় বছরে ২৬টি স্থানে এবং তৃতীয় বছরে ২০টি স্থানে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের ৩০টি কর্মসূচি নিয়ে চার বছরে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৯১-এ। গত তিন বছরে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। এবার যুক্ত হবে আরও প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী।
পাঠকের মন্তব্য