‘ইলিশ মাছ, জামদানি কি অনুপ্রবেশকারী? নাকি উদ্বাস্তু? সন্দেশ, মিষ্টি দই, আম? বাংলার সংস্কৃতি যারা জানেন না, তারা এসব বলছেন?’
নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ’র নাম মুখে না এনেই সোমবার বিধানসভা ভবনে নিজের দপ্তরে বসে বিজেপি উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। খবর এই সময়ের।
মমতা বলেন, বিজেপি সারা দেশের মানুষের মধ্যে ঘৃণার সঞ্চার করছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি করছে। যারা বাংলাকে অপমান করে তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা নেই। গত শনিবার কলকাতায় এসে আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে মমতার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এনআরসি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা রাজনীতির ইস্যু নয়, এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত।’
মমতার প্রশ্ন, বিজেপির সমস্যা কী? কেন বিজেপি বাংলাবিদ্বেষী? বাংলার প্রতি বিজেপির এত ঘৃণা কেন? আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে? বাংলায় কথা বলা কী অপরাধ? হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, সব ভাষাতেই আমরা কথা বলতে পারি। ভুলে যাবেন না বাংলা এশিয়ার দ্বিতীয়, বিশ্বের পঞ্চম ভাষা। আসলে বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি, মেধাকে ভয় পায় বিজেপি।
মমতা আরো বলেন, ‘চিরকাল উদ্বাস্তুদের পক্ষে আমি দাঁড়িয়েছি। কারণ আমি দেখেছি তাদের সংগ্রাম। উদ্বাস্তু হয়ে এসে কী লড়াই চালিয়েছেন। তারা তো ভারতীয়। আজ আবার তাড়িয়ে দেব? তাদের গ্রেপ্তার করব? আমাকে যদি বলে, মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দেখাও। আমি দেখাতে পারব? তখন তো আজকের মতো বার্থ সার্টিফিকেটের চল ছিল না। তাই আমরা অনুপ্রবেশকারী?’
বিজিবির উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘বাংলার রাজনীতি তারা বোঝেন না। আমরা ভারতীয় নাগরিকের পাশে রয়েছি। অনুপ্রবেশকারীর নাম দিয়ে আসামে ডিটেনশন করা হচ্ছে। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। শিবিরে ৮৩৩ জন রয়েছে। এদের মধ্যে নারী-শিশুও রয়েছে। ক্যাম্পে খেতে দেয়া হচ্ছে না। পানি পাচ্ছে না। মুর্শিদাবাদ থেকে কাপড় বিক্রি করতে গিয়েছিল আসামে। তাদের আটকে রাখা হয়েছে। এসব কী? এক প্রতিনিধিদল কলকাতায় এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে দেখা করব। এ রাজ্য থেকেও একটা দল সেখানে যাবে।’
উল্লেখ্য, ৩০ জুলাই আসামে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এরপরই ভারতজুড়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়।
পাঠকের মন্তব্য