বিগত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবার উপকূলের ৩০ স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘সবুজ উপকূল ২০১৮’ কর্মসূচি। উপকূলীয় ১৩ জেলার ২৩ উপজেলার ১৫০ স্কুলের দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এই নিয়ে চার বছরে এ কর্মসূচির আওতায় এসেছে উপকূলের ১৬ জেলার ২৬ উপজেলার ৪০৫টি স্কুলের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। উপকূলের প্রান্তিক জনপদের শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ ও জলবায়ু সচেতনতা, লেখালেখির চর্চা এবং সৃজনজশীল মেধার বিকাশ এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। কর্মসূচির এবারের আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূল বাঁচাই, উপকূলের সবুজ সুরক্ষা করি।’
২৫ জুলাই ২০১৮ বুধবার থেকে সাতক্ষীরার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা থেকে এবার সবুজ উপকূল কর্মসূচির সূচনা ঘটছে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর এ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে। ২০১৫ সাল থেকে উপকূলে ‘সবুজ উপকূল’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। তিন বছরে উপকূল জুড়ে ৬১টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরের ৩০টি কর্মসূটি নিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৯১-এ। গত তিন বছরে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। এ বছরের কর্মসূচি শেষে এই সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে তিন লাখে। উপকূলের ১৬টি জেলার ২৬টি উপজেলা এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। কর্মসূচির আওতায় উপকূল জুড়ে অসংখ্য ভলান্টিয়ার তৈরি হয়েছে।
উপকূলের প্রান্তিক জনপদের শিক্ষার্থীদের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ তাদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ, তথ্য ও জ্ঞান আহরণ এবং লেখালেখির চর্চার মাধ্যমে সামাজিক কাজে উদ্ধুকরণ এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- সৃজনশীল প্রতিযোগিতা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরি, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, গাছের চারা রোপণ, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ।
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে ব্যতিক্রমীধারার এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে কোস্টাল ইয়ূথ নেটওয়ার্ক আলোকযাত্রাসহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ভেন্যু স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচিতে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে থাকছে অনলাইন নিউজপোর্টাল একুশ শতক ও ইউনাইটেড নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
উপকূল জুড়ে এবার সবুজ উপকূল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩০টি স্থানে। এগুলো হচ্ছে: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চাঁদনিমূখা এমএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জের সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনার পাইকগাছার শহীদ জিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাট সদরের উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন, শরণখোলার ধানসাগর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরগুনা সদরের বুড়িরচর এএমজি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পরিরখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদরের আউলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, কলাপাড়ার কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গলাচিপার উত্তর চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাউফলের আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরমোন্তাজের লক্ষ্মী বেষ্টিন আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভোলা সদরের আবদুর রব স্কুল এন্ড কলেজ, টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনপুরার হাজীরহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরফ্যাসনের নীলিমা জ্যাকব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তজুমদ্দিনের শম্ভুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নোয়াখালীর হাতিয়ার চর ঈশ^র রায় আফাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সুবর্ণচরের চরবাটা খাসেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজারের মহেশখালীর গোরকঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়, কুতুবদিয়ার ধূরুং আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনীর সোনাগাজীর আল হেলাল একাডেমী এবং চাঁদপুরের হাইমচরের এমজেএস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
তিন বছরে সবুজ উপকূল কর্মসূচির ইতিবাচক ফললাফল প্রসঙ্গে এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, তিন বছরে ‘সবুজ উপকূল’ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উপকূল অঞ্চলের পড়–য়াদের মাঝে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট হচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা তৈরি হচ্ছে। এভাবে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়ে উঠছে তারা। শিক্ষার্থীরা পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারছে এবং আহরিত জ্ঞান ব্যক্তিগত জীবনে কাজে লাগাতে পারছে। শিক্ষার্থীদের লেখালেখি চর্চার পাশাপাশি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসছে। কর্মসূচির পথ ধরে সমগ্র উপকূল জুড়ে তৈরি হয়েছে একদল ভলান্টিয়ার; যারা গাছ লাগানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিচ্ছে।
সবুজ উপকূল কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উদ্যোক্তারা বলেছেন, বিশ^ব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপকূলের মানুষের সচেতনতার মাত্রা খুবই সীমিত। এর ভেতরে সংকট মোকাবেলায় কোন ধরণের তথ্য না জেনেই বেড়ে উঠছে উপকূলের আগামী প্রজন্ম। কেবলমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই অনেকখানি ঝুঁকি কমানো সম্ভব। উপকূল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠলেও এদের মাঝে চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা অনেক কম। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে এদের পরিস্কার ধারণা নেই। চারপাশের সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। উপকূলের শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ কম। পরিবর্তন সম্পর্কে উদ্যোগ গ্রহনের অভাবও লক্ষ্যণীয়। এই সমস্যা সামনে রেখেই সবুজ উপকূল নামের এই কর্মসূচি শুরু হয়।
পাঠকের মন্তব্য