কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, আন্দোলন হলেও তাদের ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার সংসদে ভাষণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার কথাও তিনি বলেছেন। তিনি বলেন, এই কোটা বহাল রাখতে হাই কোর্টের রায় রয়েছে।
সরকার চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল সংসদেই বক্তব্যে কোটা বাতিলের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সেদিন বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, “বারবার এই আন্দোলন.. ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা, তাতে হাই কোর্টের রায় রয়ে গেছে। যেখানে হাই কোর্টের রায় আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটা ‘বাতিলে’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘোষণা’ অনুযায়ী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো বলেছি টোটাল কোটা বাদ দিতে। কিন্তু হাই কোর্টের রায় রয়েছে। এই রায় অবমাননা করে তখন তো আমি কনটেম্পট অব কোর্টে পড়ে যাব।
“আমরা তো কেবিনেট সেক্রেটারি দিয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছি। তারা সেটা দেখছে। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায়?”
তিনি আরও বলেন, কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে এখনই মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটা কয়েক বছর ধরেই চলছে।কোটা সংস্কারের দাবিতে গত এপ্রিল মাসের আন্দোলনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা কি আন্দোলন না কি? উশৃঙ্খলতা কখনও বরদাস্ত করা যায় না।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলা হয়েছিল, ওই হামলার মামলায় আন্দোলনকারী কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাদের মুক্তি দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হলেও এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব দেখান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “ক্যামেরা দেখে একটা একটা করে খুঁজে বের করা হচ্ছে। ভিসির বাড়িতে যারা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে, আক্রমণ করেছে, তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করছে।
“যত আন্দোলনই হোক না কেন এদের ছাড়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ এরা লেখাপড়া শিখতে আসেনি।”
সংসদে এদিনের অধিবেশনে কোটা আন্দোলনকারীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাংচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌছে ভাংচুর এবং লুটপাট করা, আলমারি ভেঙে গহনাঘাটি, টাকাপয়সা সব কিছু লুটপাট করেছে। ভিসির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছে।“এটা কি কোনো শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে? কথায় কথা বলে, ক্লাস করবে না, ক্লাসে তালা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে? আমরা সেশনজট দূর করেছি। এদের কারণে এখন আবার সেই সেশনজট।”
আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা হলের গেট ভেঙে ফেলে দিবে, মধ্য রাতে হল থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে যাবে। টেনশনে আমি বাঁচি না। আমি পুলিশকে, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী তাদের বলেছি- এই মেয়েদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। ভোর ৬টা পর্যন্ত জেগে থেকে যার যার হলে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি ঘুমাতে গেছি।”
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকা খাবার। কোথায় আছে পৃথিবীর? ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে। তাহলে সিটভাড়া আর খাবারে বাজারদর যা রয়েছে, তাদের তা দিতে হবে। সেটা তারা দিক।”
সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ বাড়াতে সংবিধানের সংশোধন নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেন ২৫ বছর পর্যন্ত সময় দিলাম, তার সমালোচনা করছেন। তারা আবার নারী আন্দোলন করেন। নারী আন্দোলনও করেন, আবার সুযোগও চান। যদি কেউ সরাসরি নির্বাচন করতে চান, সেই সুযোগ তো রয়েছেই।”
সংসদে দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে ৫০টি নারী আসন বণ্টন করা হয়। দেশের নারী সংগঠনগুলো এই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচন চেয়ে আসছিলেন।
পাঠকের মন্তব্য