বাংলাদেশে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া ৬১৫ কোটি টাকা তাদেরকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ব্যবসায়ীদের একজন আইনজীবী বলছেন দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে তখন বেআইনিভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই টাকা জোর করে নেয়া হয়েছিলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাতের জের ধরে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসেছিলো সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এরপর দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন পর্যায়ে। আটকও করা হয়েছিলো অনেক রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে।
অভিযানের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার সময়ে দুর্নীতি বিরোধী টাস্ক ফোর্স বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন।
এই টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়।
পরে ২০০৯ সালে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর টাকা জমা দিয়েছেন এমন ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দেয়, যার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেই আপিল আজ খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে এখন ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে।
যে এগারোটি প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরতের দাবি করেছে তাদের মধ্যে নয়টির পক্ষে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আইনজীবী আহসানুল করিম।
তার মতে, জোর করে বেআইনি পন্থায় তখন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছিলো বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপিল বাতিল করেছে সর্বোচ্চ আদালত ।
তিনি বলছেন এখন টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে সেটা সরকারকেই ঠিক করতে হবে।
তবে শুধু টাস্ক ফোর্সই নয়, ২০০৮ সালের জুন মাসে অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিলো ট্রুথ কমিশন, যা পরে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে।
যদিও অনেকে ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থও ফেরত দিয়েছিলেন। পরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো এ অর্থ সংশ্লিষ্টরা আর ফেরত পাবেন না।
তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে করা রিট আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন তিনি আদালতে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে কোনও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জোর করে টাকা নেয়া হয়নি, বরং তারা নিজ থেকেই টাকা জমা দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি আদালতে বলেছি যে এটা কালো টাকা। আদালত বলেছেন যে প্রক্রিয়ায় টাকাটা নেয়া হয়েছে সেটা আইনসম্মত হয়নি”।
সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অবশ্য এদিন দাবি করেছেন তাদের সিদ্ধান্তে কোনও বেআইনি বা অনৈতিক কিছু করা হয়নি।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছিলাম। ব্যবসায়ীদের জেল-জুলুম বা কোর্ট-কাছারির হাত থেকে বাঁচিয়ে অর্থনীতির গতিকে স্বাভাবিক রাখতেই আমরা ট্রুথ কমিশন তৈরি করেছিলাম, যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে পার পেয়েছিলেন।”
তবে আদালতের আদেশ আবেদনকারী ব্যবসায়ীদের পক্ষে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিভিউ আবেদন করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
যদিও রিভিউ আবেদন হলে টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবী আহসানুল করিম।
পাঠকের মন্তব্য