মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায়। আর ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য তার চেয়েও দেড়-দুই টাকা বেশি নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছেড়ে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের বিনিময় হার এই দরে ‘স্থির’ রাখতে পারলেও এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। এক বছর আগে এই সময়ে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা ৫৯ পয়সা।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে গত অর্থবছরের শুরু থেকেই। ডলারের দরের এই ঊর্ধ্বগতি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, গতবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্তেও তা ধরা পড়ে।
সেখানে দেখা যায়, আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলো ডলারের যে মূল্য দেখিয়েছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার চেয়ে ২ থেকে আড়াই টাকা বেশি রেখেছে তারা।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ে ‘ইতিবাচক’ প্রভাব পড়লেও আমদানিতে খরচ পড়ছে বেশি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, দেশে বিভিন্ন বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি এবং গতবছরের দ্বিতীয় ভাগে চাল আমদানি বাড়ায় দেশে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানিতে সামগ্রিক ব্যয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এর মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। চাল আমদানি বেড়েছে ১৯৬ শতাংশ।
আমদানি বাড়ায় এবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগে কখনই বাংলাদেশের আমদানি বিল এত বেশি হয়নি।
মে-জুন মেয়াদে ১২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। চলতি সপ্তাহেই এই বিল পরিশোধ করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আকুর বিল পরিশোধের পর তা সামান্য নেমে আসবে। তবে গত অর্থবছরে রেমিটেন্সে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা।
২০০৩ সালে দেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিত।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ঠিক রাখতে ৫১৫ কোটি ডলার কিনলেও কোনো ডলার বিক্রি করেনি।
পরের অর্থবছরে বাজার থেকে ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনে নেওয়ার বিপরীতে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৫-১৬ অর্থবছরেও বাজারে ডলার ছাড়তে হয়নি। বরং ডলারের দর হারানো ঠেকাতে বাজার থেকে ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
পাঠকের মন্তব্য