এবারের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৪ দলের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আন্দোলনের পথকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। গতকাল বিকেলে নগরীর মুন গার্ডেনে বর্ধিত সভার আয়োজন করে মহানগর বিএনপি। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মহানগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবিতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী, সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাসিক নির্বাচনে জনগণের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি ফুটে উঠে।
বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু যে কোন মূল্যে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এবারের নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথকে আরো পরিষ্কার করবে। দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র অপচেষ্টাকে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। সবশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে আহ্বায়ক করে রাসিক নির্বাচন মনেটরিং কমিটি গঠন করা হয়।
একইদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নেতাকর্মীদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কেন্দ্রগুলোতে ভোট কম-বেশি হলে আপনাদের জবাব দিতে হবে। বেশি হলে পুরস্কার আর কম হলে তিরস্কার রয়েছে।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানক বলেন, ‘২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা পরাজিত হয়েছিলাম। কেন পরাজিত হয়েছিলাম? নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। শুধু আমার সামনে যারা বসে আছেন তারা নন, এই মঞ্চে যারা বড় বড় নেতা আছেন তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে হবে। শুধু কর্মীদের শপথ নিলে হবে না, আল্লাহ্কে হাজির নাজির করে এই মঞ্চে যারা বসে আছেন তাদেরকেও শপথ নিতে হবে যে, আগামি নির্বাচনে এক আত্মা এক প্রাণ হয়ে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
‘গত নির্বাচনে নেতাদের মধ্যে অনৈক্য ছিল, গাছাড়া ভাব ছিল- এখন তা নেই। নেত্রীও এই খবর পেয়ে সন্তুষ্ট। আমি নিশ্চিত, আগামী ৩০শে জুলাইয়ের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবেন খায়রুজ্জামান লিটন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা চারটি সিটি কর্পোরেশনে জয়লাভ করেছিলাম। জয়ের সেই ঢেউ দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে ছড়িয়েছিল। এবার রাজশাহী সিটিতে জয় পেলে এই অঞ্চলের ৭২টি সংসদীয় আসনে জয় আসবে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমপি গোলাম মোস্তফা, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আক্তার জাহান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার প্রমুখ।
এক মেয়র ও দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল: আসন্ন সিটি নির্বাচনে গণসংহতি আন্দোনের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ ও দুই কাউন্সিলরপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করায় এই মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, সোমবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন এই মেয়রপ্রার্থী এবং জিল্লুর রহমান ও নাসির হাসান নামে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
উল্লেখ্য, লিটন-বুলবুলসহ ৬ জন সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে একজনের মনোনয়ন বাতিল হলো। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭০ জন মনোনয়ন তুলেছিলেন। বাতিল হলো ২ জনের। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৯ই জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও ১০ই জুলাই বরাদ্দ দেয়া হবে প্রতীক। ৩০শে জুলাই সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
পাঠকের মন্তব্য