রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শোক মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ কলা ভবন থেকে শোক মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এদিকে দুই বছরেও হত্যাকা-ের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’কে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাকিব সোহানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিভাগের সভাপতি ড. এএফএম মাসউদ আখতার বলেন, রেজাউল করিম একজন সাদা-সিধে মানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে এই হত্যাকা-ের তদন্ত করে আসামিদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, ‘আমরা এমন মৃত্যু আর কখনও দেখতে চাই না। আজ আমরা প্রতিবাদ না করার কারণে এখন পর্যন্ত হত্যারকা-ের সুষ্ঠু বিচার পাইনি। অপরাধমূলক কর্মকা- দেখা মাত্রই প্রতিবাদ করতে পারলে আজ এমন মুহূর্তের মুখোমুখি হতে হতো না। আমরা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এদিকে দুই বছরেও হত্যাকা-ের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসান শতভি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শতভি বলেন ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি শরিফুল বাবার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। সে এখনও গ্রেফতার হলো না। এই বিষয়টা আমাদের খুব পীড়া দেয়। আমরা তো তার বিচারই আগে দেখতে চাই।’
সমাবেশ থেকে আগামী ৮ মে হত্যাকা-ের রায় উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় রাবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
এসময় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম, শহিদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক শেহনাজ ইয়াসমীন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ড. মোমিনুল ইসলাম, প্রভাষক রিদিতা মিজানসহ দ্ইু শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচিত এই হত্যাকা- মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের দিন ধার্য করেছেন আগামী ৮ মে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, হত্যা মামলাটিতে মোট ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেছেন।
তিনি আরও জানান, এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জীবিত ও মৃত আসামিদের সম্পৃক্ততা তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন। রায়ে জীবিত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ির কাছে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরদিন নিহতের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।