অনন্যার বর্ষ সেরা দশ নারী

  • নারী
  • ৮ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১৫
  • ছাইফুল ইসলাম মাছুম
  • ২৫৪৩ বার পঠিত
  • মন্তব্য
অনন্যার বর্ষ সেরা দশ নারী।
অনন্যার বর্ষ সেরা দশ নারী।

প্রতিবছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সেরা দশজন নারীকে সম্মাননা দিয়ে থাকেন পাক্ষিক ম্যাগাজিন অনন্যা। এবারও ২০১৭ সালের আলোচিত ও আলোকিত দশ কৃতীনারীকে সম্মাননা দিয়েছেন অনন্যা। ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০১৭’ পেয়েছেন শিক্ষায় অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম, নারী উদ্যোক্তা ফারজানা চৌধুরী, সাংবাদিকতায় নবনীতা চৌধুরী, গ্রামীণ নারী স্বর্ভিরতায় স্বপ্না রানী, তৃতীয় লিঙ্গ অধিকার কর্মী নাদিরা খানম, ক্রীড়া সংগঠক ফাহফুজা আক্তার কিরণ, সমাজ সেবায় নাজিয়া জাবীন, সংগীতে শারমিন সুলতানা সুমি ও খেলাধুলায় মারিয়া মান্ডা।

শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে দশ কৃতীনারীকে সম্মাননা তুলে দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।

বর্ষসেরা দশনারীর পরিচিতি:

অধ্যাপক সাদেকা হালিম

অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন। সাদেকা হালিমের জন্ম ও শৈশব কেটেছে পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদগ্রাম উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নে। তিনি ঢাকার উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৮৮ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নিজ বিভাগে। পরবর্তী সময় কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি। সাদেকা হালিম ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের পর‌্যন্ত তথ্য কমিশনে প্রথম নারী তথ্য কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর লেখা প্রায় ৫০টি গবেষনা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

নবনীতা চৌধুরী

সাংবাদপত্র ও বিবিসি রেডিওতে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১২ সালে একাত্তর টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন নবনীতা চৌধুরী। রাজনৈতিক খবর ও বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা শুরু করেন তিনি। তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি কলেজে পড়ার সময়। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই তিনি ভোরের কাগজে সহসম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আইন বিভাগে। এরপর একে একে কাজ করেন অনেক গণমাধ্যমে। একাত্তর টেলিভিশনে ‘একাত্তর জার্নাল’ এবং ‘একাত্তর সংযোগ’ সঞ্চালনা সাহসী সাংবাদিক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। নবনীতা চৌধুরী বর্তমানে ডিবিসি নিউজের সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

স্বপ্না রানী

উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম শহরে একজন নারী অটোরিক্সা চালাবেন, এটা বাংলাদেশের বেশির ভাগ রক্ষনশীল সমাজ ভালো চোখে দেখেন না। কিন্তু কি করবেন স্বপ্না রানী? বিধবা মা অভাবের সংসারে পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। নিষ্ঠুর স্বামী অত্যাচার শুরু করেন যৌতুকের জন্য। একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে স্বপ্নার স্বামী। স্বপ্না রানী মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। এভাবে দিন চলে অর্ধাহারে অনাহারে। কিন্তু একদিন সকাল শুরু হয় অন্যভাবে। এমন সকাল যা পাল্টে দেয় কারো কারো জীবন। স্বপ্নার একালকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রামের নারীদের অটোরিক্সা চালানোর একটি সরকারি প্রকল্পের কথা বলেন। স্বপ্না দ্বিধা না করে লুফে নেয় সে প্রস্তাব। অল্প দিনে হয়ে উঠে দক্ষ চালক। নিজে পড়তে পারেননি এখন মেয়েকে পড়াছেন, খাচ্ছেন পেটপুরে। শিক্ষা বঞ্চিত এক জন গ্রাম্য নারী হয়েও অদম্য সাহস ও চেষ্ঠার মাধ্যমে কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো য়ায়, স্বপ্না রানী তার অনন্য উদাহারন।

নাদিরা খানম

আমাদের দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে মানুষই ভাবেন না অনেকে। কিন্তু সারা বিশ্বে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা স্ব স্ব প্রতিভা অনুযায়ী সমাজ রাষ্ট্রে বিশেষ অবদান রাখছেন। তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রতিনিধি হয়ে দিনাজপুরের মেয়ে নাদিয়া খানম রংপুর সিটি কোরপোরেশনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নতুন পথের দিশারি হয়েছেন। আঠারো বছর আগে নাদিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। নাদিয়ার জীবন অন্য দশ জনের মতো স্বাভাবিক হতে পারতো। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয় সব কিছু পাল্টে দেয়। নাদিয়াদের সংগ্রামের গল্প আগামীর বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরনার।

মারিয়া মান্ডা

বাবা বীরেন্দ্র মারাক এত ছোট বয়সে মারা গেছে, জীবনে বাবার কোন স্মৃতি নেই। অভাবী সংসারে মা এনাতো মান্ডা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে জীবন ধারন করেন। এমন একটি হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মারিয়া মান্ডাই এখন দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অধিনায়ক তিনি। সাত বছর আগে বঙ্গমাতার ফুটবল দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু। অনূর্ধ্ব সাফে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার ম্যাচে শতভাগ জয়ে অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। সেই কারণে রত্নগর্ভা এনাতো মান্ডার কষ্টের জীবনও অনেক সহজ হয়েছে। মারিয়া মান্ডা প্রমান করেছেন জীর্ন কুটিরে আটকে রাখা যায় না প্রতিভার স্ফুরন।

মাহফুজা আক্তার কিরণ

বাংলাদেশে নারী ফুটবল যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার পিছনে অন্যতম প্রধান করিগরের নাম মাহফুজা আক্তার কিরণ। তাঁর নেতৃত্বে ফুটবলের সাফল্যের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমস ব্রোঞ্জ পদক, ২০১৫ সালে নেপাল এবং ২০১৬ সালে তাজিকিস্থানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল রিজিওরাল চ্যাস্পিয়নশিপে শিরোপা জয়। সম্প্রতি তিনি সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার সদস্য।ফিফার সদস্য ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মাহফুজা আক্তার কিরণ।

নাজিয়া জাবীন

নাজিয়া জাবীনের জন্ম ও বেড়ে উঠা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি সমৃদ্ধ পরিবারে। বাবা সৈয়দ মকসুদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ছিলেন। ১৯৯০ সালে ভয়াবহ দূর্ঘটনার কবলে পড়েন জাবীনের পুরো পরিবার। তাতে পরিবারের একজনের চোখ মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মানুষের কথা তাকে ভাবাতে শেখায় নতুন করে। ২০০৯ সালে ‘ছড়ার তালে মন দোলে’ নাজিয়া জাবীনের লেখা বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ বই, যা ব্রেইলে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে জাবীন তার স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা থেকে ৬১টি বই প্রকাশ করেছে। জবীন দৃষ্টিজয়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন জ্ঞানের স্পর্শ, আলোর স্পর্শ, ভালোবাসার স্পর্শ।

ফারজানা চৌধুরী

স্বীয় মেধা ও দূরর্দশী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে চলছেন ফারজানা চৌধুরী। গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নেওয়ার পর সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স যুগান্তকারী অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এগুলো হলো রেডিমিট গার্মেন্টস খাতে আরএমজি ও কর্মকর্তাদের জন্য হেলথ বিমা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাময় বিমা, নারীদের জন্য নিবেদিকা প্রজেক্ট। নিবেদিকা ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রথম এসডিজি পায়োনিয়র হিসেবে ফারজানা চৌধুরীকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট।

ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম

দেশের প্রথম নারী বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সম্প্রতি সিলেটে দ্বায়িত্ব প্রাপ্তির এক বছর পূর্ন করেছেন ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। যশোরের বাঘার পাড়া উপজেলার আন্দুলবেডিয়া গ্রাম থেকে উঠে আসেন এই মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮৬ সালে অষ্টম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

শারমিন সুলতানা সুমী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় আরবান ফোকরক ব্যান্ড চিরকুটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শারমিন সুলতানা সুমি। তিনি একই সাথে কণ্ঠ শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। সুমি চিরকুটকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংগীত উৎসব এসএক্সএস ডব্লিউতে প্রথম বাংলাদেশী ব্যান্ড হিসেবে অংশ গ্রহন করেন। গান গেয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও সুমি নাম কুডিয়েছে। ‘জালালের গল্প’, টেলিভিশন ও ‘আয়না বাজি’ সিনামায় সুমির গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ২০১৭ সালে ডুব ছবির একমাত্র গান ‘আহারে জীবন’ দিয়ে ভিষনভাবে প্রশংসিত হন তিনি।

সর্বশেষ আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১৬
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন