জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪৭তম ব্যাচের (প্রথম বর্ষ) এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত শাহেদ ইসলাম ওরফে আল আমিনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের সামনে থেকে যৌন নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে আল-আমিনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা দিতে জাবি প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান বক্তারা । সমাবেশে জাবি ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক দিদার আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। এ যৌন নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল মূলত অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এবং যারা আল আমিনের মতো মন-মানসিকতার তাদের হুশিয়ার করতে।
অভিযুক্ত ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হলেও রিপিটার হয়ে সে এখন ৪৩তম ব্যাচের ছাত্র এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্রকে মারধর করা হচ্ছে এমন খবরে প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে উপস্থিত হয়ে আল আমিনকে গণধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন জানায়, ‘ওই ছাত্রীর সাথে তার পরিচয় হয় ফেসবুকে। পরিচয়ের তৃতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের সামনের মাঠে (বৃন্দাবন) তাদের দেখা হয়। এসময় আল আমিন ঐ ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব দেয়ার পরপরই শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইলে ছাত্রীটি তাকে বাধা দেয়।’ এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেয়েটি আল আমিনকে ফোনকল করে দেখা করতে চায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় দেখা করতে এলে ঐ ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বিভাগের সহপাঠী এবং সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে। মঙ্গলবার আল আমিনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ যেহেতু ঘটনাটি যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে সেহেতু এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী যে সেল রয়েছে তারাই দেখবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি ভঙ্গের কারণে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে।’
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বুধবার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রক্টর একুশ শতককে বলেন, আল-আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার নামে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আল আমিন ইতিপূর্বে ৪৬ ব্যাচে জাবিতে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান তালিকায় থাকা এক ছাত্রীকে ভিসি কোটায় ভর্তি করানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ভর্তি জালিয়াতির এই ঘটনায় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আল আমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
পাঠকের মন্তব্য