সাকিব এমনই। কখনো আশা জাগিয়ে ডোবান। কখনো আবার খাদের কিনারা থেকে উঠে আসেন নিজে, টেনে তোলেন দলকে। কলম্বোতেও দেখা মিলল এমন সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশের শততম টেস্টটাকে রাঙিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় সবার মধ্যেই ছিল। প্রথম দিনে অসাধারণ বল করে প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন বোলাররা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটসম্যানরা শুরুটা করেছিলেন ভালো। তবে দিনের শেষ চার ওভারের পাগলামিতে সেই ভালো আর থাকেনি। টেস্টে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হতে হয়েছে সাকিবকে। কিন্তু তৃতীয় দিনে সমালোচনার সেই কাঁটাকে প্রশংসার কুসুম বানিয়ে দিলেন। সেঞ্চুরি করে ঢুকে গেছেন টেস্ট ইতিহাসের ১৪০ বছরের ইতিহাসে দারুণ এক কীর্তি গড়াদের ছোট্ট তালিকায়। দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা মাত্র অষ্টম ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন সাকিব।
দিলরুয়ান পেরেরার বলে সুইপ করে চার মেরে ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন এসে অগ্রজ সতীর্থকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন। ক্যামেরা এরপর ঘুরে গেল বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের দিকে। মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমানরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন অনেকক্ষণ ধরে। সাকিবের এই সেঞ্চুরিতে যে অনেক কিছুই ছিল। গতকাল শেষ চার ওভারে বাংলাদেশের পাগলাটে ব্যাটিংয়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তার জবাবও যে দেওয়া গেল এতে। এটা গোটা দলের জন্যই তাই বিরাট এক স্বস্তি হয়ে এসেছে।
দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরির এমন কীর্তি ক্রিকেট বিশ্ব প্রথম দেখেছিল ১৯১২ সালে। অস্ট্রেলিয়ার শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন দুজন—চার্লস কেলেওয়ে আর ওয়ারেন ব্র্যাডসলি। এই দুজনের সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি ইনিংস ও ৮৮ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩৭ বছর পর এই কীর্তি গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বিলি ওয়েড। তবে সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে তাঁর দল হেরে যায় ৩ উইকেটে।
১৯৭২ সালে নিউজিল্যান্ডের শততম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করেন বেভান কংডন আর মার্ক বারগ্রেস। কংডনের সেঞ্চুরিটি ছিল আরও বিশেষ। দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা প্রথম অধিনায়ক যে তিনি। পরে এই কীর্তি ছোঁন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার। গত বছরের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন অধিনায়ক ক্রেমার। তাঁর আগে ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের শততম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন ওপেনার মাজিদ খান।
নিজ দেশের শততম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান
ব্যাটসম্যান দল সাল
১. চার্লস কেলেওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ১৯১২
২. ওয়ারেন ব্র্যাডসলি, অস্ট্রেলিয়া ১৯১২
৩. বিলি ওয়েড, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৪৯
৪. বেভান কংডন*, নিউজিল্যান্ড ১৯৭২
৫. মার্ক বারগ্রেস, নিউজিল্যান্ড ১৯৭২
৬. মাজিদ খান, পাকিস্তান ১৯৭৯
৭. গ্রায়েম ক্রেমার*, জিম্বাবুয়ে ২০১৬
৮. সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ২০১৭
পাঠকের মন্তব্য