মোজাম্মেল লেনিন: আমি লেনিন, সার্টিফিকেট অনুযায়ী মোজাম্মেল হক, পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ওমর আলী খন্দকার - ( সরকারের সকল সঠিক দলিল ভুক্ত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমার বাবা, যিনি বর্তমানে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছেন, এর পূর্বপর্যন্ত একজন দায়িত্বশীল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেছেন)। ব্যক্তিগত জীবনে আমার বাবা আওয়ামী লীগ এর রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্নস্তরে বিভিন্ন পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এখনো করেন যা আমাদের নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের সাংসদ থেকে শুরু করে শিবেন দা পর্যন্ত অবগত।
প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা,
উপরের অংশের বহুত তাৎপর্য আছে সেটা পরে জানাবো। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে সকাল বেলা ঘুমাচ্ছিলাম এরই মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ন ফোনকল আসলো আমার ভাংগাচোরা সেলফোনটা তে। মাঝে মাঝে আসে এমনি দুএকটা কল। এতে খুব অবাক হওয়ার কিছু নাই। যথারীতি সালাম দিলাম। ওপার থেকে উত্তর ও পেলাম। তারপর মহাশয় বললেন, লেনিন তোমার কোন লেখা দেখছি না। আমি হতবাক, ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। বললাম ভাই কি লেখা? ভদ্রলোক বললেন এই যে কোটা নিয়ে দেশে এতো তোলপাড়, লিখে দাও দেশে এক ভাগ উপজাতির জন্য পাঁচ ভাগ কোটা থাকলেও সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নাই,নারী কোটা নিয়ে কোন কথা নাই, জেলা কোটা নিয়ে কোন আলোচনা নাই কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোট নিয়ে এতো সমালোচনা, তবে কেন এমন হবে? মুক্তিযোদ্ধাকোটা নিয়ে যারা কথা বলে তারা বিএনপি, রাজাকারদের উত্তরসুরী। ভাইয়ের কথাগুলো অনেকাংশে যৌক্তিক হলেও খানিকটা অবাক হলাম কিছুটা বিষ্মিতও বটে। উনি আমাকে দিয়ে লেখাটা প্রকাশ করতে চান আবার সাজেশন টা ও ফিক্সড করে দিচ্ছেন। যাইহোক ফোন রেখে আর ঘুম আসলো না আপন মনে ভাবতে লাগলাম কতোটা গাধা ছিলাম ছাত্রজীবন থেকে। কতোশত ঘটনার ভীলেন বানানো হয়েছিলো কিছুই টের পাই নি কোনদিন। কয়েকটা ঘটনা নিজের সামনেই ধরা পড়েছে।
কিছুদিন যাবৎ খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাথে কথা হয় না কারন সে কোটার এক্সট্রীম লেভেলের সংস্কারক এমনকি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গায়ে লাগার মত কয়েক টা স্ট্যাটাস প্রসব করেছে, যা মেনে নিতে না পেরে বেশ কষ্ট করে হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আমরা। সেদিন ও বললো তুই তো কোটা সংস্কারের পক্ষে তাহলে একটা ভাল লেখা দে ফেসবুকে।
আগেই বলে রাখি আমি নিজেও কোটার সার্কুলারে একটা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীরত তবুও আমি বিদ্যমান কোটা সংস্কারের পক্ষের একজন মানুষ। বিবেকের তাড়না থেকে বলেন আর আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে বলেন আমি সব সময় ই সত্যের সাথে পথ চলতে শেখা একটা মানুষ, শত সহস্র বিপদেও অন্যের জন্য ক্ষতির চিন্তা আমার মাথায় আসে না। যেটা বলছিলাম, আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে,হ্যা অবশ্যই আমি বিদ্যমান কোটার সংস্কার চাই তবে এক ইঞ্চি ছাড় দিয়ে নয়, নয় দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বিশ্বের মানচিত্রে যারা এঁকে দিলো লাল সবুজের পতাকা তাদের প্রতি একটি কটাক্ষও সহ্য করে নয়।
হ্যা, আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে তবে কোন স্লোগানের একটি বাক্যেও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অশালীন ভাষা ব্যবহার করলে তোমাদের মিছিলে আমাকে পাবে না। আমি আমার বন্ধুর বিকেলের ক্লান্ত চোখে কোটার সংস্কার চাই, আমি হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা আমার জুনিয়রের স্বপ্নভঙ্গের আহাজারীতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই, আমি হাজার- হাজার সাধারন শিক্ষার্থীর গ্রাম্য খেটে খাওয়া বাবা- মায়ের স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদ্যমান কোটার সংস্কার চাই,ক্লাসের মেধাবী তরুনের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার চাই,আমি আমার মেয়ে কে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যমান কোটার সংস্কার চাই !!! তবে আবারো বলছি একটি বারের জন্যও মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তযোদ্ধা ও তাদের পরিবার কে নিয়ে কোনরুপ কটাক্ষ করে নয়।
ইতিহাসের “হেমলক” নিয়ে সক্রেটিসের গল্প আমাদের প্রজন্মের জন্য ঘুম পাড়ানীর মাধ্যম হলেও সেটা কতোটা নির্মম ইতিহাস তা কেবল ইতিহাসবেত্তাগন ই ভাল জানেন। উনত্রিশ বছরের শিক্ষায় নির্মোহভাবে আমার কাছে যেটা ধরা পড়েছে সেটা আর্জেস গ্রেনেড নয় বরং স্লো পয়জন দিয়ে ধ্বংশ করা হচ্ছে একটা ঐতিহাসিক জাতিকে। যে জাতি তাঁর ভাষার জন্য, ভূখন্ডের জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমান করছে তাদের স্বদেশপ্রেম কিন্তু অত্যন্ত সূচারুরুপে এই মানুষগুলো কে ঠকিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পরাজিত শক্তির উত্তরাধীকারীরা। প্রশ্ন জাগে, কিভাবে?
সচেতন ছাত্র সমাজ একটু লক্ষ্য করুন ; ১৯৭৫ সালের ১৫ আগ্স্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর বাংলার ক্ষমতার মূল মসনদে বসেছে কারা?
- অবৈধ সেনা শাসক
- আমলা নামধারী ঐ পাকিস্তানী জারজ। যারা অত্যন্ত সূক্ষভাবে বিভিন্ন ভাইভাবোর্ডে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ফেল করিয়ে দেশের শাষনভার থেকে দূরে রাখছে।
কোটা বিরোধী আন্দোলন একটি সংবেদনশীল ইস্যু, এখানে মূলত আন্দোলনটা করছে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুনরা যারা কোটার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ। দেশে মোট ৫৬ ভাগ কোটা। সমাজে কোটা সুবিধা ভোগকারী আমাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ ( নারী সহ)। তাই অধিকসংখ্যক মানুষের কথা বিবেচনা করা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
কোটা সংস্কার :
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান -১০ ভাগ
প্রতিবন্ধী কোটা -০২ ভাগ
আদিবাসী কোটা - ০১ ভাগ
নারী কোটা - ০৫ ভাগ ( আগামী দশ বছরের জন্য)
জেলা কোটা - ০২ ভাগ
মেধা কোটা -৮০ ভাগ
কোটা হবে সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত। কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে বিগত সব সার্কুলার মিলে শূন্যপদের বিপরিতে নিয়মিত বিজ্ঞপ্তির পাশাপাশি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শূন্যপদ পূরন করতে হবে। নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে শুরু থেকেই কোটার সুবিধা দিতে হবে।
লেখক: মোজাম্মেল লেনিন
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক (সাবেক)
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠকের মন্তব্য