কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলের ডাকা ছয় ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পুলিশের আপত্তিতে আগেই শেষ হয়ে গেছে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বুধবার সকাল ১০টায় অনশন শুরু হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও বেলা একটায় তা শেষ করে বিএনপি। তবে এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে চেষ্টা করে যোগাযোগ করা যায়নি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির আজ ছিল তৃতীয় দিন। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে দলটি।
আজকের কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টায় বিএনপির নেতারা প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতের ওপর বিছানো কার্পেটে বসে পড়েন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ফুটপাতের ওপর রাখা চেয়ারে বসেন। তাঁদের ঘিরে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
বিএনপির অনশন চলার সময় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সদস্যরা রাস্তা থেকে ভিড় সরানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মাইকে বিএনপির নেতারা বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অনশন কর্মসূচি বেলা একটার মধ্যে শেষ করতে হবে। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যার মতো চলে যেতে থাকেন।
দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছোটাছুটি করছিলেন। পরে দেখা গেল, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর পিছু নেয়। গোয়েন্দা পুলিশের দলটি প্রেসক্লাবের ভেতর দিয়ে সচিবালয়ের সামনে যায়, এরপর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের খবর পাওয়া যায়নি।
অনশন কর্মসূচি শেষের একটু আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানাতে প্রেসক্লাবে আসেন। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং এর মধ্য দিয়ে অনশন কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
এ সময় ফখরুল ইসলাম বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্ত অনশন চলার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের অনুরোধের কারণে বেলা একটায় অনশন কর্মসূচি শেষ করা হয়েছে। এই কর্মসূচি থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানান তিনি।
অনশন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দিনব্যাপী অনশন আমরা বেলা একটার মধ্যে শেষ করতে বাধ্য হচ্ছি। এই সরকার আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, বিএনপিকে দুর্বল করে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে চায়। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া এ দেশে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষের স্বাধীনতা নেই। অথচ একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা আজকে হুমকির মুখে। আজকে চার দিন ধরে যাঁরা খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দেননি, তাঁদের ব্যাপারে মামলা করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করার জন্য দলের মহাসচিবকে অনুরোধ করেন তিনি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনশন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এবং ২০–দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য দেন।
পাঠকের মন্তব্য