চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে ফেসবুকে ফাঁদ পেতেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে পুলিশের সদস্যরা প্রশ্ন কেনাবেচার গ্রুপে ঢুকে পড়ছেন। প্রশ্ন কিনছেন। আর পুলিশের এই ফাঁদে গত কয়েক দিনে ধরা পড়েছে এক ডজনের বেশি লোক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ ও পুলিশি তৎপরতার মধ্যেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা যায়নি। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়াসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়নি। বরং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষার সাতটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষার শুরুর আগে-পরে আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেটের গতি সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত থেকে আজ সোমবার সরে এসেছে সরকার। তবে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে আরেক নতুন নির্দেশনা। যেখানে বলা হচ্ছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে কাউকে মোবাইল ফোনসহ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে নতুন নির্দেশনাকে ‘অবাস্তব’ বলে মন্তব্য করছে খোদ পুলিশ। ঢাকার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, তাঁর থানা এলাকায় এমন কেন্দ্র আছে যার ৩০ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যেই বড় সড়ক ও ফুটপাত রয়েছে। সেখান দিয়ে সকাল থেকেই মানুষ হেঁটে ও গাড়িতে চলাচল করে। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা আইন মানতে হলে এখন তাদের গণহারে গ্রেপ্তার করতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস জানতে না পারলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে ফেসবুকে ফাঁদ পাতার বিষয়টি কাজে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপকমিশনারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ফেসবুকে হাজারের বেশি গ্রুপ খোলা হয়েছে। এসব যাচাই–বাছাই করে পুলিশের কাজ চলছে। তবে প্রশ্ন ফাঁসের উৎস এখনো জানা যায়নি।
প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নজরদারি করার দায়িত্বে থাকা ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকে হাজারো গ্রুপে ঢুঁ মারতে এখন তাদেরও ভুয়া আইডি খুলে ক্রেতা সেজে প্রশ্ন কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যেই কয়েক হাজার টাকার প্রশ্ন কেনা হয়েছে। সকালবেলা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাঁচ শ টাকাতেই পাওয়া যায়। কেনাও হয়েছে এ দরে। লেনদেন হয়েছে বিকাশ নম্বরে। এর সূত্রধরেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারদের কেউ এখন পর্যন্ত বলেননি কোত্থেকে প্রশ্ন পেয়েছেন। এরা একজন আরেকজনের গ্রুপ থেকে প্রশ্ন কিনেছেন বলে জানাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এক শিক্ষকের কথা বলেছেন। ফেসবুকে ‘রাতুল স্যারে’–এর গ্রুপ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার কথা অনেকে বলেছেন। কিন্তু এটিও ভুয়া আইডি।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন বলেন, তাঁরা ফেসবুকে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপরেও নজরদারি চলছে।
এত দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন নিয়ে যাওয়ার পথে বা কেন্দ্রে প্রশ্ন নিয়ে যাওয়ার পর ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি পরীক্ষার আগের রাতে ফেসবুকে আসা হাতে লেখা একটি গণিতের প্রশ্ন সমাধানসহ পাওয়া গেছে। তাতে ওই ধারণা বদলে যায়।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হন বলে মনে করা হতো। তবে গণিতের হাতে লেখা প্রশ্ন পাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে এর উৎস ভিন্ন।
গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, শুধু শিক্ষকেরা নন। কেন্দ্রে দায়িত্বরত যে কোনো কর্মকর্তা, পিয়ন বা অন্য স্টাফরাও এ কাজ করতে পারেন। পুলিশ এখনো প্রশ্ন ফাঁসের গোড়ায় পৌঁছাতে পারেনি। তাই এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
পাঠকের মন্তব্য