হ্যাকিং করে রিজার্ভ চুরির দুই বছর পার হলেও এখনো এই ঘটনায় ব্যাংকের ভেতরে কারা জড়িত তা বের করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।
এ বিষয়ে সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
দোষীদের চিহ্নিত করতে এই দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধীদের সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি-না সেই প্রশ্নও এখন সামনে আসছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটলেও সেসময় প্রায় একমাস তা গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শেষ পর্যন্ত এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে।
অর্থ চুরি নিয়ে সেসময় সরকারিভাবে একটি তদন্তও হয়।
তবে সেই তদন্ত প্রতিবেদনটি পরে আর আলোর মুখ দেখেনি।
এই তদন্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণভাবে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়েও মুখ খুলছেন না ব্যাংকটির কেউ।
কয়েকদফা যোগাযোগের পর ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। কারণ, আমাদের এখানে সিআইডি এখন এটা নিয়ে তদন্ত করছে।”
রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি সরকারের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন।
তার তদন্তে ঘটনায় জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই কয়েকজনের নাম উঠে আসে।
তিনি অবশ্য বলছেন, এ ঘটনায় কারা সত্যিকারভাবে জড়িত তা চিহ্নিত করার দায় সিআইডি’র।
“আমাদের ইনভেস্টিগেশনটা তো কোন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন না। এটা প্রশাসনিক। যদি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন করে দেখা যায় যে, যাদের নাম এসেছে তারা আসলে না বুঝে করেছেন, নাকি লাভবান হওয়ার জন্য করেছেন। এই অংশের তদন্তটা কিন্তু সিআইডির তাড়াতাড়ি করলে ভালো হয়।”
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র তদন্তও এখনো শেষ হচ্ছে না।
তদন্ত শেষ করতে সংস্থাটি এ পর্যন্ত আদালতের কাছে সময় নিয়েছে ২০ বার।
তদন্ত যে সহসাই শেষ হচ্ছে না, সে বিষয়েও ধারণা দিচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজি নন সিআইডির কোন কর্মকর্তা।
এই অবস্থা কোনমতেই স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
“পুরো বিষয়টির মধ্যে সরকারের একটা দায়িত্ব ছিলো, ব্যাংকের একটা দায়িত্ব ছিলো এই ঘটনায় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো কি-না সেটা খতিয়ে দেখা এবং থাকলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। সেটি হয়নি।”
তিনি বলছেন, “শুধু বলা হচ্ছে, বিষয়টা তদন্তাধীন। কী তদন্ত হচ্ছে এবং সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে কি-না, সে সম্পর্কে আমরা কিন্তু কিছু জানতে পারছি না। যারা যোগসাজসে আছেন বলে অভিযোগ উঠছে, তাদেরকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে কি-না সে প্রশ্নটা ওঠা খুই স্বাভাবিক যতক্ষণ না আসলে কী ঘটেছিলো তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা না হয়।”
এদিকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে ফেরত আনার ক্ষেত্রেও রয়েছে দীর্ঘসুত্রতা।
যা চুরি হয়েছে, তার খুব কম অংশই ফেরত আনা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ফেরত আনা গেছে দেড় কোটি ডলার। ৎ
বাকী সাড়ে ৬ কোটি ডলারের ফেরত আনা নিয়ে জটিলতা আছে।
এর মধ্যে প্রায় পৌনে এক কোটি ডলার ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বাকী অর্থ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।
“ফিলিপাইন সরকার যাদের মাধ্যমে টাকাটা সেদেশে গেছে, তাদের সম্পদ জব্দ করার জন্য একটা মামলা করেছিলো। মামলাটি এখনো চলছে। আইনগত এই প্রক্রিয়া কিভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করে টাকাটা ফেরত আনা যায় সেজন্য আমরা এখন কাজ করছি।”
অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার প্রশ্নটি উঠে আসলেও বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত মামলায় না গিয়ে আপোষের ভিত্তিতেই খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে চায়।
পাঠকের মন্তব্য