বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে সোমবার অনশনের দশম তম দিনে আন্দোলনরত ২১৪ জন শিক্ষক অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। তাদের মধ্য কয়েকজন নারী শিক্ষিকাও রয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের পশ্চিম পাশে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র ব্যানারে অনশনে অংশ নিয়েছে হাজারখানেক শিক্ষক।
বেসরকারি প্রাথমিক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলো শর্ত পূরণ করলেও জাতীয়করণ করা হয়নি। তাদের হিসাবে এ ধরনের বিদ্যালয় আছে ৪ হাজার ১৫৯টি। এগুলোতে শিক্ষক আছেন ১৬ হাজার ৩৩৬ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসা শিক্ষকেরা দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের অনেকেই হাতে প্ল্যাকার্ট, ব্যানার, মাথায় ফিতা এবং ভাতের থালায় বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান লিখেছেন। তার মধ্যে কিছু লেখা অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। শ্লোগান গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো ‘মা থালা আছে ভাত নাই’, ‘মা আমাকে ভাত দাও’ ইত্যাদি।
আন্দোলনে অংশ নিতে নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলা থেকে ঢাকায় এসেছেন স্বপন চন্দ্র দাস। তিনি মাদ্রাসা বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১০ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। স্বপন জানান, প্রথম দিকে তারা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন করে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসেও, কোন সুফল না পাওয়ায় এখন আমরণ অনশন করছেন।
হবিগঞ্জের কারগাও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, ১৯৯১ সাল থেকে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষকতা করলেও এখন পর্যন্ত কোন বেতন ভাতা পাননি।
ছয় বছর বয়সী শিশু প্রিয়ন্ত দাসকে সাথে নিয়ে অনশনে যোগ দিয়েছেন হাতিয়া উপজেলার আল আমিন বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সিফলা রানী দে। তিনি ১১ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষকতা করছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবার চলছে স্বামীর দিন মজুরীর টাকা দিয়ে। তিনি জানান, অভাব অনটনেও দীর্ঘ দিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছি। আশায় বুক বেঁধে ছিলাম একদিন জাতীয়করন হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ২৬ হাজার ১শত ৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার ঘোষণা মতে শর্ত পূরণ করার পরও প্রায় ৪১৫৯ টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়নি।
পাঠকের মন্তব্য