বিশ্ব জুড়ে রবিবার পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস। বাংলাদেশেও তথ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করেছে।
দেশটিতে সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানেই এখন সেবা পেতে আঙ্গুলের ছাপসহ নানা ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়। কিন্তু এসব তথ্য কতটা সুরক্ষিত?
ব্যক্তিগত এসব তথ্য বেহাত হয়ে কেউ যেন ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য কোনও ব্যবস্থা আদৌ আছে কি?
আসলে বাংলাদেশে সরকারি নানা কাজ ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিতে গ্রাহক বা সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়াটা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এবারের তথ্য সুরক্ষা দিবসে এসব বিষয়কে ধরেই নানা কর্মসূচি পালন করেছে নানা সংগঠন, যার একটি সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটির সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ বলছেন নানা প্রয়োজনে কিংবা সেবা পেতে মানুষ ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ নানা ব্যক্তিগত যেসব তথ্যাদি দিয়ে থাকে সেগুলো সুরক্ষিত না থাকলে পরবর্তীতে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন।
তার মতে এসব তথ্য বিশেষ করে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যারা এগুলো সংগ্রহ করছেন তাদেরকেই এগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে - এমন আইনি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সরকারিভাবে মূলত সবার ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ ব্যক্তিগত তথ্যের ভিত্তিতেই দেয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র ।
তবে মোবাইল ফোনের সিম রেজিস্ট্রেশন বা কেনার জন্যও যে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলিয়ে দেখা হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথেই।
এছাড়া ব্যাংকসহ নানাকাজে গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি।
এই তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (আই-সাকা) ঢাকা চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এ কে এম নজরুল হায়দারের কাছে।
তিনি বলেন, “যে কোনও মাধ্যমে আমরা প্রচুর ব্যক্তিগত ডাটা দিই বা এমনকি মোবাইলে কোন অ্যাপস ডাউনলোড করতেও অনেক তথ্য দিতে হয়। অথচ যারা এগুলো নিচ্ছে তারা কীভাবে সংরক্ষণ রাখছে তার কোন আইন নেই, নেই কোন শাস্তির ব্যবস্থাও।”
“অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের তথ্য নিচ্ছে কিন্তু তারা কীভাবে সেগুলো রাখছে সেটি নিশ্চিত নয়”, মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারি নীতির আওতায় বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টেলিকম অপারেটর গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছয় কোটিরও বেশি।
সেখানে প্রতিটি গ্রাহকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি সহ ব্যক্তিগত যে সব তথ্য নেওয়া হয়েছে সেগুলো কতটা নিরাপদ বা সুরক্ষিত?
জবাবে প্রতিষ্ঠানটির চিফ কর্পোরেট অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, “আমাদের যে প্রক্রিয়া তাতে গ্রাহকের তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে আমাদের কাছে। তবে আমাদের ভান্ডারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষিত রাখার কোন সিস্টেমই নেই।”
তিনি জানান সিম দেয়ার সময় যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট তারা নেন সেটি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজে। সেখান থেকে সংকেত পেলেই অপারেটররা কোন গ্রাহককে সিম দিতে পারেন।
তবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজের (সিসিএ) নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম সচিব) আবুল মানসুর মোহাম্মদ শরাফ উদ্দিন বলছেন তথ্য চুরি করলে আইসিটি অ্যাক্টে শাস্তির বিষয় লেখা আছে।
তবে তারপরেও ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি স্বীকার করেন।
তবে সুরক্ষা অধিকারকর্মীরা বলছেন তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের এখনই প্রয়োজন যাতে করে যারা এগুলো সংগ্রহ করছেন, বিশেষ করে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, তারাই যেন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
পাঠকের মন্তব্য