ডিজিটাল মুদ্রার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। জাপানের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল মুদ্রার বিনিময় প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ‘চুরি’ হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের ডিজিটাল অর্থ। গতকাল শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। ডিজিটাল মুদ্রাগুলো যে ইন্টারনেট ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে, সেটির হদিস পাওয়া গেছে। তবে চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, জাপানে ডিজিটাল মুদ্রার অন্যতম বড় বিনিময় প্রতিষ্ঠান কয়েনচেক জানিয়েছে তাদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হ্যাক করে এই বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হয় ক্রিপ্টো-কারেন্সি। এরই মধ্যে বিটকয়েন বাদে সব ধরনের ক্রিপ্টো-কারেন্সি জমা ও উত্তোলন স্থগিত করেছে কয়েনচেক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা এনইএম-এর তহবিল। জাপানি দৈনিক আশাহি শিম্বুন এ খবর নিশ্চিত করেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ খবর নিশ্চিত করে, তবে এটি হবে ডিজিটাল মুদ্রার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা। এর আগে ২০১৪ সালে টোকিওভিত্তিক আরেকটি বিনিময় প্রতিষ্ঠান এমটিগক্সের নেটওয়ার্ক থেকে ৪০ কোটি ডলার চুরি গিয়েছিল। চুরির ঘটনা স্বীকার করার পর ওই প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে গিয়েছিল।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত কয়েনচেক টোকিওভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের আগস্টে প্রতিষ্ঠানটির টোকিও কার্যালয়ে ৭১ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। শহরের শিবুয়া ডিস্ট্রিক্টে এর প্রধান কার্যালয় রয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে। এ মুদ্রার লেনদেনের পুরোটাই হয় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা অনলাইনে। যদিও এটি কোনো দেশের বৈধ বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা নয়, তার পরও দিন দিন বেড়ে চলছিল এ ধরনের ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার জনপ্রিয়তা। মূলত ইন্টারনেটের জগতে অনেকটা শেয়ার বা মুদ্রার মতো লেনদেন হয় এসব ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। তাই নিয়মিত এগুলোর দর বা বিনিময়মূল্য ওঠানামা করে।
সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বলেছে, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা এনইএমের বিনিময়মূল্য ১১ শতাংশ কমে ৮৭ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য ক্রিপ্টো-কারেন্সির মধ্যে বিটকয়েনের বিনিময়মূল্য ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং রিপলের বিনিময় মূল্য ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে।
কয়েনচেক জানিয়েছে, চুরি যাওয়া অর্থ তাদের ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ‘হট ওয়ালেটে’ রাখা হয়েছিল। এর সঙ্গে সঙ্গে ‘কোল্ড ওয়ালেটে’ অফলাইনে রাখা হয়েছিল এ সংক্রান্ত তহবিল। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, ডিজিটাল মুদ্রাগুলো যে ইন্টারনেট ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে, সেটির হদিস পাওয়া গেছে। কয়েনচেকের কিছু সূত্র বলেছে, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পূরণ করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হতো।
কয়েনচেক এক বিবৃতিতে বলেছে, গতকাল শুক্রবার হ্যাকাররা নেটওয়ার্কে হামলা চালায়। এর সাড়ে আট ঘণ্টা পর হ্যাকিংয়ের ঘটনা জানা যায়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইউসুকে ওতসুকা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘হামলার সময় ডিজিটাল মুদ্রার বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৫৮ বিলিয়ন ইয়েন মূল্যমানের অর্থ অন্য একটি ইন্টারনেট ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।’
কয়েনচেক এখন বের করার চেষ্টা করছে যে, তাদের মোট কতজন গ্রাহক এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কোন স্থান থেকে হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছে, তাও বের করার চেষ্টা চলছে।
ইউসুকে ওতসুকা আরও বলেন, ‘আমরা জানি কোথায় তহবিল পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি এবং আশা করছি ওই তহবিল ফিরিয়ে আনা যাবে। এই মুহূর্তে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি।’ এরই মধ্যে এ ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ ও জাপানের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য