ফেসবুকে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে সাংবাদিক ও পুলিশের বচসার ভিডিও

  • ঢাকা
  • ২৩ জানুয়ারী ২০১৮, ২২:০২
  • বিবিসি বাংলা
  • ১৯৭১ বার পঠিত
  • মন্তব্য
পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের বিরুদ্ধে।
পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে সড়কের উল্টো পাশ দিয়ে একজন সাংবাদিকের গাড়ি চালানোর কারণে তাদেরকে থামানোর পর পুলিশের সঙ্গে বচসা নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উল্টো পথে গাড়ি চালানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

আলোচিত ভিডিওটি শুক্রবার রাতে ঢাকার বেইলি রোড থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করা একটি লাইভ ভিডিওর অংশ।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে আসার জন্য বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের কাছে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইছে পুলিশ।

কিন্তু তিনি সেটি দিতে অস্বীকার করছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলছেন, পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তার কথা হয়েছে।

এই ভিডিওটি করেছেন, মুনজারিন ইশতিয়াক নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী।

ঘটনার পর পুলিশ তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে সব ভিডিও মুছে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ফেসবুকে সরাসরি লাইভ হওয়ায় ভিডিওটি থেকে গেছে, যা পরে ভাইরাল হয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।

কিভাবে তিনি ভিডিওটি করেছিলেন এই প্রশ্নের জবাবে মি. ইশতিয়াক বলেছেন, “বেইলি রোডে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি উনাকে প্রথম দেখি শান্তিনগর সিগন্যালে। ওখানে উনাদের এবং পুলিশের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। আমি পুলিশের পিছন পিছন গেছি দেখার জন্য যে এখন ওরা কি করে। কারণ ওই ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যাচ্ছিল উনি অনেক প্রভাবশালী কেউ।”

“ভিডিওর এক পর্যায়ে উনি আমার ফোন কেড়ে নিতে চান, জানতে চান আমি কে? আমি কিছু না বলে ভিডিও করি, কিন্তু পরে এক পর্যায়ে উত্তর দেই- আমি উৎসাহী জনতা।”

বিষয়টি নিয়ে গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখিও হচ্ছে। সেই সঙ্গে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর পরেও পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের বিরুদ্ধে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি দাবী করেছেন, তিনি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি।

“আমি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, আমি একুশে টিভির সিইও, এটা যারা ফেসবুকে লেখালেখি করছেন, তারা বের করেছেন। কিন্তু যে ভিডিও করেছে বা পুলিশ, জিজ্ঞেস করে দেখেন তো আমি তাদের নিজের পরিচয় দিয়েছি কিনা?”

“পুলিশও বারবার জানতে চেয়েছে আমি কে। কিন্তু আমি পরিচয় দেইনি, ফলে প্রভাব খাটানোর প্রশ্ন আসছে না।”

“আমি যদি প্রভাব খাটাতে চাইতাম, তাহলে আমি পরদিন ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতাম, আইজিপির সঙ্গে কথা বলতাম। কিংবা আমার ক্রাইম রিপোর্টারকে বলতাম, এর বিষয়ে খোঁজ নেন। এসবের কিছুই করিনি আমি।”

তবে এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উল্টোপথে গাড়ি চালানোর বিষয়টি নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে।

রাস্তার উল্টো দিকে গাড়ি চালানোর কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ট্রাফিক পুলিশের চালানো এক অভিযানে সচিব, প্রতিমন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের জরিমানা করার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় একদিনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ৫০টি গাড়িকে জরিমানা করার পর বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু আলোচিত হলেও দেখা গেছে, উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক ডিভিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম বলেছেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করতে অনেক সময়ই হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।

“মূল বিষয়টা কেবল প্রভাবশালী না, ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নিতে গেলে যে কোন সাধারণ মানুষও পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় নষ্ট করে আমাদের। প্রভাবশালী বলেন আর যেই হোক, ট্রাফিক প্রসিকিউশনের ইস্যু আসলে সবার কাছ থেকেই আমরা অসহযোগিতা পাই।”

তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু কালকেই হয়তো রাতারাতি এর ফল পাবেন না।”

তবে তিনি স্বীকার করেছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ম ভঙ্গ করে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া বেশিদূর অগ্রসর হয়না।

কিন্তু মিঃ আলম বলছেন, নিয়ম মানার সংস্কৃতিতে ঘাটতি আছে, আর সেটি ঠিক করারই চেষ্টা করছে ট্রাফিক বিভাগ।

সর্বশেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারী ২০১৮, ১৩:২৭
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন