ঈশ্বরদীতে ঢ্যাঁড়স চাষ বাড়ছে, ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

চাষিরা জানান, গতবারের তুলনায় এবার প্রতি মণ ঢ্যাঁড়স ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
চাষিরা জানান, গতবারের তুলনায় এবার প্রতি মণ ঢ্যাঁড়স ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার ঢ্যাঁড়সের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশি ও উচ্চফলনশীল জাতের ঢ্যাঁড়স স্থানীয় হাট-বাজারের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন চাষিরা। লাভজনক হওয়ায় এক দশক ধরে এ এলাকায় ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেড়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতে এবার ঢ্যাঁড়স বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, গতবারের তুলনায় এবার প্রতি মণ ঢ্যাঁড়স ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। এতে দ্বিগুণ দাম পাচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স আবাদে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। তবে প্রতি বিঘা জমির ঢ্যাঁড়স উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

মুলাডুলির আটঘরিয়া গ্রামের ঢ্যাঁড়সচাষি ইয়ামিন খন্দকার বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঢ্যাঁড়সের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে তাঁরা ঢ্যাঁড়স বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স আবাদ করেছেন। এতে খরচ পড়েছে এ পর্যন্ত আট হাজার টাকা। আরও খরচ পড়বে। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি পাঁচ মণ ঢ্যাঁড়স বিক্রি করেছেন আট হাজার টাকায়। দাম এ রকম থাকলে তিনি আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ঢ্যাঁড়স বিক্রি করবেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানকার সাত ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় এ বছর সাড়ে পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়সের আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয় পাঁচ হাজার বিঘায়। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর ঢ্যাঁড়সের আবাদ বাড়ছে। উপজেলার মুলাডুলি, সলিমপুর, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ঢ্যাঁড়সের আবাদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বাকি ইউনিয়নেও ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেড়ে চলেছে। এখানকার মাটি ঢ্যাঁড়স চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ১০ বছর ধরে ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেড়ে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, চাষিরা আউশ ধান আবাদ করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ঢ্যাঁড়স চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। পতিত জমিতেও ঢ্যাঁড়সের আবাদ হচ্ছে। ঢ্যাঁড়স সম্ভাবনাময় সবজি ফসল। মৌসুমের শুরুতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত চাষিরা এক বিঘা জমির ঢ্যাঁড়স উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। এখানে বর্তমানে দেশি জাতের ঢ্যাঁড়স ছাড়াও উচ্চফলনশীল তিন জাতের ঢ্যাঁড়সের আবাদ হয়। চাষিরা ঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করায় অন্য সবজির তুলনায় ঢ্যাঁড়সে কীট-পতঙ্গের আক্রমণ কম। ঢ্যাঁড়স চাষে শ্রমিক ও সারের খরচও কম লাগে। বাড়ির নারী-পুরুষেরা সহজে খেতে এসে ঢ্যাঁড়স তুলতে পারেন। এতে চাষিদের শ্রমমূল্য সাশ্রয় হয়। স্থানীয় মোকামে আনার পর ব্যাপারীরা নগদ টাকায় ঢ্যাঁড়স কিনে নেন।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ঈশ্বরদীর মুলাডুলি সবজির আড়ত ও হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে সবজির আড়তে ঢ্যাঁড়সের আমদানি শুরু হয়েছে। মুলাডুলি সবজি আড়তের অর্থ সম্পাদক আমিনুর রহমান ওরফে শিম বাবু জানান, বর্তমানে তাঁদের আড়তে প্রতি মণ ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এতে প্রতি কেজির পাইকারি দাম পড়ছে ৪০ টাকা। প্রতিদিন এই মোকাম থেকে তিন-চার ট্রাক ঢ্যাঁড়স ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে যাচ্ছে। প্রতি ট্রাকে তিন মণ ওজনের ৭০ বস্তা ঢ্যাঁড়স থাকে। ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে প্রতি ট্রাকের ঢ্যাঁড়সের দাম পড়ছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন জামাল বলেন, সম্ভাবনাময় ও লাভজনক সবজি হওয়ায় প্রতিবছর ঈশ্বরদী উপজেলায় ঢ্যাঁড়সের আবাদ বাড়ছে। লিচুর পরেই এখানে ঢ্যাঁড়সের আবাদ বেশি। এখানকার পাঁচ হাজার কৃষক ঢ্যাঁড়স চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। চাষিরা এখন মাঠ থেকে ঢ্যাঁড়স তুলে বিক্রি শুরু করেছেন। তাঁরা ভালো দামও পাচ্ছেন। এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঢ্যাঁড়সের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭, ০৩:১৪
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন