ভারতে রাজনৈতিকভাবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি যে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, অনেকে বলছেন তার পেছনে সেখানকার মুসলমান ভোটারদের ভোট একটা অবদান রেখেছে।
কিন্তু যেখানে বেশিরভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠী চিরাচরিতভাবে বিজেপির রাজনীতির বিরোধী, সেখানে বিজেপির ভোটবাক্সে মুসলমানদের ভোট গেল কীভাবে?
কারা ভোট দিলেন বিজেপিকে? ভারতে এ নিয়েই এখন জোর চর্চা চলছে।
অথচ এবারের বিধানসভা ভোটে বিজেপি ৪০৩টির মধ্যে একজনও মুসলমান প্রার্থী দেয় নি। যদিও রাজ্যে ১৭.৫% মানুষ মুসলমান। আর কিছু কেন্দ্রে ২৭% পর্যন্তও মুসলমান ভোটার রয়েছেন।
কিন্তু তা স্বত্বেও দেখা যাচ্ছে যে মুসলমানরা যেসব বিধানসভা এলাকায় নির্ণায়ক জনগোষ্ঠী, সেরকম অনেক আসনেই বিজেপি ভাল ফলাফল করেছে।
এক তৃতীয়াংশ মুসলমান ভোটার রয়েছেন, এরকম ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে ৩১টি আসনে। এগুলির মধ্যে রয়েছে দারুলউলুম যেখানে অবস্থিত, সেই দেওবন্দ-ও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আসমার বেগ বলছিলেন, “মুসলমানরা এককাট্টা হয়ে ভোট দেন - এটা একটা কল্পকাহিনি। অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর মতোই মুসলমানদের ভোটও নানা দলে ভাগ হয়। কিছু রাজনৈতিক দল এই কাহিনিটা চালু করেছে যে মুসলমানরা যেদিকে ভোট দেবে, তারাই সরকার তৈরি করবে। আর এই কথাটা চালু হয়ে যাওয়ার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোট বিপরীত দিকে মেরুকরণ হয়ে যায়।”
প্রাথমিক যা হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে যে সমাজবাদী পার্টি আর বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থীদের মুসলমানরা ভোট দিয়েছেন। কিছু ভোট পেয়েছে অন্য কয়েকটি ছোট দল একই সঙ্গে বিজেপি-ও পেয়েছে মুসলমান ভোট, মন্তব্য করছিলেন অধ্যাপক বেগ।
লখনৌর সংবাদদাতা সমীরাত্মজ মিশ্রর কথায়, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে মুসলমান ভোট সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেস জোট এবং বহুজন সমাজ পার্টির মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। আর এই ভোট ভাগাভাগির লাভটা পেয়েছে বিজেপি প্রার্থীরা।”
২০১৪ সালের সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভলপিং সোসাইটিস বা সিএসডিএস যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তা উল্লেখ করে অধ্যাপক বেগ বলছিলেন, “সেবার অন্তত ১০% মুসলমান বিজেপিকে আর সমসংখ্যক মুসলমান কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিলেন।”
চিরাচরিতভাবে কংগ্রেস আর তার পরে সমাজবাদী পার্টি মুসলমানদের ভোট পেয়ে এসেছে। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই সেই ট্রেন্ডের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল।
শুধু যে সাধারণ মুসলমানদের একটা অংশ বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন তা নয়। ফলাফল ঘোষণা দিনও বেশ কিছু মুসলমান নারী-পুরুষকে দেখা গিয়েছিল লখনৌতে বিজেপি-র দপ্তরে আনন্দোল্লাসে মেতে উঠতে।
এক সাক্ষাতকারে আবার বেশ কয়েকজন মুসলমান নারী পুরুষকে বলতে দেখা গেছে যে তাঁরা নির্বাচনের এই ফলাফলে হতাশ।
পাঠকের মন্তব্য