দেশের প্রতি দশজনের একজন ছেলে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যৌন নিপীড়নের সাথে জড়িত থাকে নিকট আত্মীয় ও পূর্ব পরিচিতরা। নিরাপদ শৈশবের উদ্দেশ্য (নিশু) নামে একটি সংগঠনের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনটির উদ্যোক্তাদের একজন রিফাহ শারমিলি বাঁধন একুশ শতককে বলেন, ধারণা করা হতো মেয়ে শিশুরাই কেবল যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু আমরা জরিপ করতে গিয়ে মেয়ে শিশুর পাশাপাশি ছেলে শিশুরাও যে যৌন নিপিীড়নে শিকার হয়, এমন অনেক কেস স্টাডি আমরা পেয়েছি।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সংগঠনটির ‘এ জার্নি টোয়ার্ডস এ সাফার চাইল্ডহুড’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য চিত্র তুলে ধরে।
নিরাপদ শৈশবের উদ্দেশ্য (নিশু)’র জরিপের তথ্য মতে, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ৩০ শতাংশ শিশু। পঞ্চম শ্রেণিতে যেতে না যেতে নির্যাতনের হার দাঁড়ায় ৮৭.৫ শতাংশে। বয়োঃসন্ধির আগেই নির্যাতনের শিকার হয় ৯০ শতাংশ শিশু। যার মধ্যে ৮৩ শতাংশই আক্রান্ত হয় নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে।
সংগঠনটি এক বছর ধরে মাঠপর্যায়ে ঢাকা ও সাতক্ষীরার ১০টি স্কুলের ৬শ শিশুর উপর এ জরিপ পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে দুটি বিশেষ স্কুলও রয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে কনটেস্ট করে আইন প্রণয়ন করলেও তা শিশুদের রক্ষা করতে পারছে না। কেননা বাবা-মা, শিক্ষক ও আত্মীয়-স্বজনরা ফ্রি না শিশুদের সঙ্গে। তাই বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের বন্ধু হয়ে তার কথা শোনা।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রোকসানা সুলতানা বলেন, শিশু যৌন নিপীড়ন আমাদের সমাজে ট্যাবু। কেউ খোলামেলা এই বিষয়ে আলোচনা করতে চায় না। শিশুদের যৌনতা সম্পর্কে জানাতে হবে। তাদের শিক্ষা দিতে হবে কোনটা ভালো আদর আর কোনটা খারাফ আদর।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডেইলি এশিয়ান এজের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শোয়েব চৌধুরী, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল মাবুদ প্রমুখ।
এসময় শিশু যৌন নিপীড়ন রোধে প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রোকসানা সুলতানা, আইনজীবি হাসনেইন জায়গীরদারসহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
নিরাপদ শৈশবের উদ্দেশ্য (নিশু)’র প্রতিষ্ঠাতা ইফফাত জাহান তুষার অনুষ্ঠান শেষে একুশ শতককে বলেন, শিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা খুবই ভয়ানক। শিশুদের সঙ্গে যারা এ ধরনের আচরণ করছে সবাই তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পূর্বপরিচিত। ফলে শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে বুঝেই উঠতে পারেনা তাদের সাথে খারাফ আচরন হচ্ছে।
তুষার বলেন, শিশুরা যাতে নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে ‘নিরাপদ শৈশবের উদ্দেশ্য (নিশু)’ কাজ করবে। আয়োজন করবে শিশুদের নিয়ে কর্মশাল, বিশেষ অনুষ্ঠান। নিপীড়নে শিকার শিশুদের কাউন্সিল করবেন, নিয়মিত জরিপ পরিচালনা করে শিশুদের সঠিক চিত্র তুলে ধরবেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে।
পাঠকের মন্তব্য