ধর্মীয় উস্কানি ঠেকাতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তির প্রস্তাব নাকচ করেছে ফেসবুক

ফেসবুকের মাধ্যেমে অপরাধ তৎপরতা ঠেকানোর বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে, সেটি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে বোঝা যায়।
ফেসবুকের মাধ্যেমে অপরাধ তৎপরতা ঠেকানোর বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে, সেটি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে বোঝা যায়।

বাংলাদেশে পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক জানিয়েছেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে তারা একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করতে চাইলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাতে রাজী হয়নি।

ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঠেকানো এবং তাদের ভাষায় ”ধর্মীয় উস্কানি” বন্ধ করতে তারা একটি চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। তবে মি. হক জানিয়েছেন যেকোন বিষয়ে পুলিশ এখন দ্রুত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।

ফেসবুকের মাধ্যেমে জঙ্গীবাদ এবং অন্য অপরাধ তৎপরতা ঠেকানো বাংলাদেশের পুলিশের জন্য কতো বড়ো চ্যালেঞ্জ?

পুলিশ প্রধান বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম তাদের (ফেসবুক) সাথে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) করতে। কিন্তু তাদের নীতিমালায় কোন দেশের সাথে এমওইউ করে না । তারা এমওইউ করতে সম্মত হয়নি। তবে তারা বলছে, একটা ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ করেন। আপনাদের সাথে আমাদের ডাইরেক্ট যোগাযোগ হবে। ”

বাংলাদেশ ও এশিয়ার ১৪টি দেশের পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের নিয়ে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান।

এই সম্মেলনে ইন্টারপোলের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং ফেসবুক প্রতিনিধিও যোগ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের পুলিশ ফেসবুকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল যাতে কোন বাংলাদেশি অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে ফেসবুকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট নম্বর দেবার বিধান চালু করা যায় কীনা। কিন্তু সে বিষয়ে সরাসরি কোন উত্তর দেয়নি ফেসবুক।

বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, “আমরা এ প্রস্তাব তাদের দিয়েছি। তারা বলেছে এ প্রস্তাব তারা বিবেচনা করে দেখবে।”

বাংলাদেশের পুলিশ মনে করছে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ এবং ‘ধর্মীয় উস্কানি’ বন্ধের জন্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আরো বেশি নজর দিতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ও পরিবর্তনের সাথে-সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপরাধ তৎপরতাও বাড়ছে।

পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগ ইন্টারনেট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জিয়া রহমান মনে করেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে পুলিশ যে ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে সেটি বেশ প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব অপরাধ হচ্ছে সেগুলো মোকাবেলার জন্য পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

অধ্যাপক রহমান বলেন, যারা জঙ্গী কার্যক্রমের সাথে জড়িত হচ্ছে, তাদের অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ দক্ষ। সেটির সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে।

ফেসবুকের মাধ্যেমে অপরাধ তৎপরতা ঠেকানোর বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে, সেটি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে বোঝা যায়।

কয়েকদিন আগেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সংসদে জানিয়েছেন, ফেসবুকে ধর্মের নামে প্রতারনা বন্ধে গত দেড় বছরে ১৯৬টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে সরকার অনুরোধ করেছিল। এর মধ্যে ৮৭টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী সংসদে তথ্য দিয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারী ২০১৮, ০০:৪৬
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন