‘ডিআরইউ’ বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ডে হ্যাট্টিক করলেন উপকূল বন্ধু

'ডিআরইউ' বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ডে হ্যাট্টিক করলেন উপকূল বন্ধু রফিকুল ইসলাম মন্টু।
'ডিআরইউ' বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ডে হ্যাট্টিক করলেন উপকূল বন্ধু রফিকুল ইসলাম মন্টু।

উপকূলের পথে পথে খবরের খোঁজে ছুটে চলা উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃত, “উপকূল বন্ধু” রফিকুল ইসলাম মন্টু। এবার অনলাইনে “সম্ভাবনাময় উপকূল” শিরোনামে দশ পর্বের প্রতিবেদন লিখেছেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা
রিপোর্টাস ইউনিটি-”ডিআরইউ” বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড জিতে হ্যাট্টিক করলেন তিনি। অসংখ্য খবরের ভিড়ে উপকূলের খবরকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছেন তিনি।

খবর সংগ্রহে অবিরাম ছুটে চলেন উপকূলে। তিনি উপকূল-সন্ধানী সংবাদকর্মী। উপকূলের খবর লিখেন নিয়মিত গণমাধ্যমে। সব সময় ভাবনায় ঘুরে উপকূলকে এগিয়ে নেওয়ার। উপকূলে খবরের খোঁজে গিয়ে তিনি ঘুমহীন জীবন কাটান। খবরের সংগ্রহের অনেক সময় গভীর রাত হয়ে যায়। তখন দুর্গন্ধওয়ালা ইলিশে আড়তে ঘুমাতে হয় তাকে।
কখনো জেলে কিংবা বেদেদের নৌকায় ঘুমিয়ে রাত পার করেন। কখনোও কোন এনজিওর গেস্ট হাউজে, কখনোও-বা প্রান্তিকের ইউনিয়ন পরিষদে। এভাই তিনি উপকূল থেকে একের পর তথ্য তুলে আনেন কেন্দ্রের গণমাধ্যমে।
রোববার (২৬নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ প্রদান করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ডিআরইউ এর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন জুরি বোর্ড-এর সভাপতি শাহজাহান সরদার ও ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন
নোমানী। এবার তৃতীয়বারের মত রিপোর্টারদের সম্মানজনক এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন রফিকুল।

এর আগেও তিনি উপকূলের জেলেদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন লিখে ২০১৪ সালে এবং অরক্ষিত উপকূল বিষয়ে প্রতিবেদন লিখে ২০১৫ সালে এই অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। উপকূলের যত আঁকা-বাঁকা পথ আছে সবই তার চেনা, সবই তার নখদর্পনে। প্রান্তিকে প্রতিক্ষণ তার খবরের খোঁজ। যার পরিচিতি উপকূলের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত। মেঘনার এপার থেকে ওপারে গেলে প্রান্তিকের মানুষ তাকে দেখে চমকে উঠে বলেন, ‘আরে! আপনাকে তো ওপার দেখে এলাম!’ কেউ হয়তো বলে ওঠেন, ‘একবার ঈদের দিন তো আপনি আমাদের বাড়ি গিয়েছিলেন!’

উপকূলের সব ধরণের খবর লিখেন তিনি। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ নজর।
উপকূল পড়ুয়াদের সৃজনশীল মেধা বিকাশে তিনি উপকূলজুড়ে গড়ে তোলেছেন আলোকযাত্রা দল। যেটি গন্ডি পেরিয়ে পা রেখেছে ঢাকাতেও। উপকূলের অসংখ্য পড়ুয়ারা এখন তার পথেই হাঁটছেন। তাকে অনুসরণ করে জীবন পরিবর্তনের দেখছে ওরা। দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের কোমল হাতে লেখা ফিচার, প্রতিবেদন, গল্প, কবিতা, উপন্যাস দিয়ে দেয়ালপত্রিকা “বেলাভূমি” প্রকাশের প্রচলন ঘটান। ইতিমধ্যে উপকূলের প্রায় দেড় শতাধিক স্কুলে বর্তমানে বেলাভূমি নিয়মিত বের হচ্ছে। ভাবতেও অবাক লাগে তার সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান এই বেলাভূমি! এখান থেকেই বের হচ্ছে আগামির উপকূল মনস্ক সাংবাদিক। উপকূলকে এগিয়ে বহু প্রয়াস তার ভেতর। অনুভব করেন উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রয়োজন। যে
দিন একই সবাই উপকূল সুরক্ষার কথা বলবে। ভাবতে থাকেন, কোন দিন হতে পারে সেই দিনটি? খোঁজে
বের করেন ‘৭০-এর ১২ই নভেম্বর ঘটে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের দিনটিকে। নাম দিয়েছেন “উপকূল দিবস” যে দিন প্রাণ ঝরেছে প্রায় ৫লাখ মানুষের! ইতিমধ্যে এবছর উপকূলের ৩৪টি স্থানে একযোগে বিভিন্ন সামাজিক দিবসটি পালনে
অংশ নিয়েছে। বিবিসি, ভয়েস অব অ্যামেরিকার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে দিবসটি পালনের খবর। উপকূলকে এগিয়ে নেওয়ার জোর প্রচেষ্টার পেছনে এমনিভাবে নেপথ্যে তিনি। করেন উপকূল নিয়ে গবেষণাও।

বাংলাদেশের উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃতও তিনি। এসব কাজের স্বীকৃতিও মিলেছে। লাভ করেছেন “উপকূল বন্ধু” উপাধি। ঝুলিতে জমেছে আরো অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার, পিআইবি-এটুআই অ্যাওয়ার্ডসহ বেশকিছু জাতীয়- আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। এমন অর্জন
সম্পর্কে নিজ অনুভূতিতে তিনি বলেন, “বহু খবরের মাঝেও আমার লেখার মাধ্যমে উপকূল প্রাধান্য পেয়েছে বলে আমি আনন্দিত। এজন্য যারা আমার কাজে বিশেষভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আসলে, উপকূলের খবর অন্ধকারেই থেকে যায়। ঘূর্ণিঝড় এলেই কেবল গণমাধ্যমের ক্যামেরা উপকূলের দিকে ফিরে। এর আগে এবং পরে
উপকূলবাসীদের জীবন স্বাভাবিকের চেয়ে কতটা যে অস্বাভাবিক তা গণমাধ্যমে উঠে আসেনা। আমাদের সবার সহযোগিতায় আমরা ফিরে পেতে পারি এক নিরাপদ উপকূল। যেখান থেকে কোন প্রাণহানির খবর আসবেনা। নিশ্চিন্তে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকবে মানুষ।”

সর্বশেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ২২:১৩
জুনাইদ আল হাবিব
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন