তাদের দিন কাটে রাস্তায়, সেখানেই বেড়ে ওঠা। মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। সমাজে তারা অবহেলিত। সব দেখেশুনে আপনার মনে হতে পারে, তাদের জন্মই যেন আজন্ম পাপ। তাদের কেউই জানে না সঠিক জন্মতারিখ। তারপরও সেইসব পথশিশুদের জন্মদিন পালন করা হলো বেশ আনন্দ নিয়ে। গত ১৭ নভেম্বর এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত এক শতাধিক পথশিশুর ব্যতিক্রমী জন্মদিন পালন করল ইনলাইটেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন।
পথশিশুদের জন্মদিন পালন করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেন আয়োজকরা। কেক, চকলেটসহ বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে পথশিশুদের মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তারা। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল যেন একদিনের জন্য হলেও দুঃখময় জীবন ভুলে তারা দিনটি উপভোগ করতে পারে। সত্যিই যেন ওই দিনটি হয়ে ওঠে তাদের কাছে অন্যতম।
জন্মদিন উৎসবে অন্য আর দশটা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মতো সাত বছরের শিশু রাবেয়াও ছিল। মাথায় জন্মদিনের টুপি পরে সবার সাথে সে আনন্দে মেতে উঠেছে। কেক খেতে খেতে হাসি মুখে সে ছুটে বেড়াচ্ছিল স্টেশনের এদিক-ওদিক। কাছে ডেকে অনুভূতির কথা জানতে চাইতেই একগাল হেসে সে বলল, ‘আজ আমার খুব ভালো লাগতাছে। ভাইয়া আপুদের কাছ থাইকা মজার কেক, চকলেট, আপেলসহ ম্যালা কিছু উপহার পাইছি। আমাগো এমন জন্মদিন আবার হইলে ভালো হয়।’ তার কাছে যখন জানতে চাইলাম, বড় হয়ে সে কী হতে চায়? তখন সে বলল, বিমান চালানো তার স্বপ্ন। এয়ারপোর্টে প্রতিদিন কত বিমান ওঠা-নামা করে। কে জানে সেটা দেখেই হয়তো রাবেয়া স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে একদিন সেও বিমান চালাবে।
ইনলাইটেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সজীব রায় বলেন, ‘সমাজে অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে প্রতিটি দিনই সমান। জন্মের পর থেকে অবহেলায় বড় হওয়া শিশুদের জীবন কাটে রাস্তার পাশে কিংবা বস্তির কোনো জীর্ণ ঘরে। পরিবার ও সমাজের ভালোবাসা বঞ্চিত এই সব ছিন্নমূল শিশুদের জীবনে বিশেষ কোনো দিন নেই। জন্মদিন পালন তাদের কাছে বিলাসিতা। এমনকি তাদের অনেকে জানেই না জন্মদিন কবে। ছিন্নমূল অসহায় পথশিশুদের জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন। এই ইভেন্টের মধ্য দিয়ে আমরা শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সমাজের সকলের কাছে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সমাজের সকলের উচিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসা।’
সংগঠনের আরেক উদ্যোক্তা শাওন জামান বলেন, ‘আমাদের এই ইভেন্টকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তাদেরই একজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফা হোসেন। তিনি ফেসবুকে আমাদের ইভেন্ট দেখে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের সাথে আনন্দের অংশীদের হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি একশ পথশিশুর জন্য নিজ হাতে বানানো জন্মদিনের ক্যাপসহ চকলেট বেলুন উপহার দিয়েছেন। আমরা এটাই চেয়েছি যাতে মানুষ এ বিষয়ে সচেতন হয়।’
আসিফা বলেন, ‘পথশিশুদের এই ইভেন্টের কথা জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। শিশুদের জন্য কিছু করতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছিল যখন নিজ হাতে ওদের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছিলাম।’
এই উৎসবে পথ শিশুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ইনলাইটেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের সাথে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু, এছাড়াও ছিলেন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক জাকারিয়া জামান, বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক মুরাদ খান , সেই সাথে ছিলেন যমুনা ব্যাংকের ফাষ্ট এসিসট্যান্ট ভাইস প্রসিডেন্ট ব্যাংকার শামীম আহমেদ, ফিচার রাইটার নাদিম মজিদ সহ আরো অনেকেই।
পাঠকের মন্তব্য