“উপকূলের জন্য হোক একটি দিন, কণ্ঠে বাজুক প্রন্তজনের কথা” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নসহ উপকূল সুরক্ষার লক্ষ্য সামনে রেখে ১৯৭০ সালের ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ১৫ জেলার ন্যায় লক্ষ্মীপুর এবং রায়পুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে ‘‘উপকূল দিবস’’।
দিবসটি উপলক্ষে রোববার দুপুরে র্যালি, আলোচনা সভা ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। র্যালিটি শহরের তমিজ মাকের্টেস্থ ঈদগাঁহ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে স্থানীয় একটি পত্রিকা কার্যালয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান। সাংবাদিক বিএম সাগরের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সাংবাদিক আলী হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা.আশফাকুর রহমান মামুন, লক্ষ্মীপুর জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি শাহজাহান কামাল, দালালবাজার কলেজের প্রভাষক আজিজুর রহমান আযম, কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক কার্তিক রঞ্জন সেনগুপ্ত। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান, সাংবাদিক সানা উল্যাহ সানু, রবিউল ইসলাম খাঁন, আলোকযাত্রা লক্ষ্মীপুর দলের টিম লিডার ও খুদে সংবাদকর্মী জুনাইদ আল হাবিব প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে ১২ নভেম্বরকে জাতীয় উপকূল দিবস ঘোষণার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে রায়পুর প্রতিনিধি জানান, উপকূল দিবস বাস্তবায়নের দাবিতে রায়পুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি র্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্হিত ছিলেন- রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক কাজি জামসেদ কবির বাক্কি বিল্লাহ, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুকান্ত মজুমদার, মুকুল পাটওয়ারী, সৈয়দ আহম্মদ ও রায়পুর সামাজিক সংগঠন ফ্রেন্ডস ফোরামের সভাপতি তুহিন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রায়পুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুল আলম মিন্টু ও সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ভূঁইয়া দুলাল। দিবস পালনের প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ, কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ, আলোকযাত্রা দল।
এত দিবসের ভিড়ে উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস প্রসঙ্গে উদ্যোগের সঙ্গে উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত বহুমূখী দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করেন। কেবল দুর্যোগ এলেই এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খবরাখবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও তাদের জীবন যে কতটা অস্বাভাবিক, সে বিষয়ে খুব একটা খোঁজ রাখা হয়না। উপকূলের দিকে গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের নজর বাড়িয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটানোই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য।
১২ নভেম্বর ‘উপকূল দিবস’ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিবস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ১২ নভেম্বরকে বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, ১৯৭০ সালের এই দিনটি উপকূলবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। এদিন বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইকোন’। এই ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূল। বহু মানুষ প্রাণ হারান। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন। এই ঘূর্ণিঝড় গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ৮ই নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয়। ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৮৫-২২৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই উপকূলে আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে প্রায় দশ লাখ।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতি আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে চলতি বছরের ১৮ মে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতি ঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য