দেশ জুড়ে উন্নয়ন মেলা, চাকরির মেলা, আয়কর মেলা, শৈশব মেলা, হরেক রকম মেলার ভিড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল দিন ব্যাপি প্রজাপতির মেলা।
প্রজাপতি মেলায় জাবির ক্যাম্পাস জুড়ে উড়ছিল বাহারি রংয়ের প্রজাপতি। কোনটির রং লাল, কোনটি রং গাঢ় সবুজ। এছাড়াও নীল, হলুদ, বেগুনী, গোলাপী, বাদামীসহ নানান রংয়ের প্রজাপতি।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’- স্লোগানে ৪ নভেম্বর অষ্টমবারের মতো প্রজাপতি মেলার আয়োজন করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
সকাল সাড়ে দশটায় মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রজাপতির সঙ্গে প্রকৃতির কি সম্পর্ক, পরাগায়নে প্রজাপতি কি সাহায্য করে তা আমরা এ প্রজাপতি মেলার মাধ্যমে জানতে পারছি। প্রজাপতি প্রকৃতির কোনো উপকার করে কিনা, তা না জেনেই আমরা প্রজাপতির পেছনে ছুটি, ভালো লাগার কারণে। এ মেলার কারণে প্রজাপতি ও প্রজাপতির উপকার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। প্রজাপতি প্রকৃতিরই অংশ। প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছে। প্রজাপতিকে ভালোবেসে আমরা তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষা করতে পারি।’
মেলা দেখতে ক্যাম্পাসে ভিড় জমিয়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রজাপতি প্রেমি মানুষেরা। দি স্যালভেশন আর্মী ইন্ডিগ্রেড চিলড্রন্স সেন্টার এর প্রধান শিক্ষক তোড়া বিশ্বাস তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন প্রজাপতি মেলায় ঘুরতে। তিনি একুশ শতককে বলেন, ‘ছোট বেলায় গ্রামে প্রজাপতির সাথে খেলা করতাম। সারা দিন ছুটতাম রঙিন প্রজাপতির পিছে। এখন ইট পাথারের নগর শহরে সব হারিয়ে গেছে। আজ অনেক দিন পর এক সাথে অনেক প্রজাপতি দেখলাম। সত্যি অসাধারন। আমার মাথায় ঘুরছে এখন প্রজাপতি মুখর সোনালী শৈশব।’
মেলায় ঘুরতে এসেছেন স্টামফোর্ড সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান হৃদয়। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমি এই প্রজাপতি মেলায় এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখলাম বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির ছবি ও কিছু জীবন্ত প্রজাপতি। আসলেই এই মেলা আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রজাপতির সাথে এক অন্যরকম ভাবে পরিচয় করে দিচ্ছে। প্রজাপতি যেন আমাদের মাঝে থেকে হারিয়ে না যায়। এজন্য এই মেলা শুধু জাবিতেই নয় সারাদেশে, জেলা গুলোতে করার উদ্যোগ নিলে ভালো হবে।’
প্রজাপতি মেলার ফটো গ্যলারিতে একুশ শতকের সাথে কথা হয় জাবির ভূতাত্ত্বিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আখিঁ পালের সঙ্গে। তিনি দ্বিতীয় বারের মতো অংশ নিয়েছেন প্রজাপতি মেলায়। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য সমাবেশ। আর প্রজাপতি মেলা তো নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু। এবারের মেলায় অসম্ভব সুন্দর আর বিরল প্রজাতির অনেক প্রজাপতি রয়েছে, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না।’
এবারের মেলায় দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল- র্যালি, প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোরদের জন্য), প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, হাট দর্শন (জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন), অরিগামি প্রজাপতি, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারী বিতর্ক (প্রজাপতি ও জলবায়ু পরিবর্তন), প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
প্রজাপতি মেলায় প্রজাপতির চোখ এবং কালার ভিশনের গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য জাপানের গ্রাজুয়েট ইউনিভার্সিটি ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের অধ্যাপক কেনটারো আরিকাওয়াকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ দেওয়া হয়। এছাড়া ‘ইয়াং বাটারফ্লাই এনথ্যুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের লোক প্রশাসনের শিক্ষার্থী আফলাতুন কায়সারকে।
পাঠকের মন্তব্য